• রাজা রামমোহন রায় : একেশ্বরবাদী রাজা রামমোহন রায় কে ‘ভারতের প্রমিথিউস', ‘ভারতের পথিকৃৎ' এবং ‘ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ' বলা হয়। 1815 খ্রিস্টাব্দে তিনি আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন। 1825 খ্রিস্টাব্দে এটি প্রথমে 'ব্রহ্মসভা'য় এবং পরে 1828 খ্রিস্টাব্দে 'ব্রাহ্মসমাজ' -এ পরিণত হয়। তিনি ফারসি ভাষায় 'তুহফাত-উল-মুহাইদিন' ও ‘The Percepts of Jesus' গ্রন্থ দুটি রচনা করেন। 1817 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে তার ভূমিকা ছিল। ডেভিড হেয়ারের সঙ্গে মিলিতভাবে তিমি স্কুল বুক সোসাইটি গঠন করেছিলেন। তার অনুরোধে বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা রদ করে ছিলেন। সংবাদ কৌমুদী পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে লেখনীর মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারদের বৈষম্যমূলক আচরণ ও ইংরেজদের জুরি আইনের বিরোধিতা করে জনমত গঠনের চেষ্টা করেছিলেন। 1833 খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের ব্রিস্টল শহরে তার মৃত্যু হয়।
• ডিরোজিও : ডেভিড ড্রুমণ্ড সাহেবের কৃতি ছাত্র লুই হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেছিলেন তার নাম নব্য বঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ডিরোজিও ভারতবর্ষকে জন্মভূমির মত ভালোবাসতেন বলে ‘To India- my native land' কবিতাটি লিখেছিলেন। টমপেনের 'Age of Reason' বইটি তার ছাত্ররা বাইবেল বলে মনে করত। 1827 খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিও তার এন্টালির বাসভবনে প্লেটোর 'ডেমোট্রেজ' সভার আদলে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলেন। প্যারীচাঁদ মিত্র রাধানাথ শিকদার রামতনু লাহিড়ী কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রভৃতি তার অনুগামী ছিলেন। তিনি পার্থেনন, হেসপেরাস, ক্যালকাটা লিটারেরি গেজেট, ক্যালকাটা ম্যাগাজিন, ইন্ডিয়ান ম্যাগাজিন, বেঙ্গল অ্যানুয়াল, ক্যালেইডে-স্কোপ, এনকোয়ারার, জ্ঞানান্বেষণ প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন।
• ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : বিদ্যাসাগর 1855 খ্রিস্টাব্দে ‘পরাশর সংহিতা’র ব্যাখ্যা করে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়নের জন্য এক হাজার মানুষের সই সম্বলিত আবেদনপত্র সরকারকে জমা দেন। 1856 খ্রিষ্টাব্দে 16 জুলাই লর্ড ক্যানিং বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন করেন। ওই বছর 24 পরগনা জেলার খাঁটুয়া গ্রামের শ্রীশচন্দ্র (ব্যানার্জি) বিদ্যারত্ন কে কলকাতার 12 সুকিয়া স্ট্রিটে 10 বছরের কালিমতী নামে এক বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন। নিজ পূত্র নারায়ণকে ভবসুন্দরী নামে এক অষ্টাদশী বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন। বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় 1860 খ্রিস্টাব্দে আর একটি আইন পাস হয় যার দ্বারা মেয়েদের বিবাহের নূন্যতম বয়স 10 বছর ধার্য হয়। নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য মোট 35 টি বালিকা বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন। নারীদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ড্রিংকওয়াটার বেথুনের সঙ্গে মিলিতভাবে বেথুন স্কুল ও কলেজ তৈরি করেছিলেন। তিনি বর্ণপরিচয়, বোধোদয়, কথামালা, সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস, বেতাল পঞ্চবিংশতি ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর নিজের খরচে কলকাতায় 'মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন' (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) তৈরি করেন।
• কেশব চন্দ্র সেন : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কেশব চন্দ্র সেন এর বৈপ্লবিক চিন্তাধারার বিরোধ বাধলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ব্রাহ্মসমাজের আচার্য পদ থেকে বহিষ্কার করেন। ফলে 1866 খ্রিস্টাব্দের কেশব চন্দ্র সেন 'ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ' গঠন করেন। 1869 খ্রিস্টাব্দে মন্দির মসজিদ ও গির্জার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে 'ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম মন্দির' গঠন করেন। 1872 খ্রিস্টাব্দে তার চেষ্টায় 'তিন আইন' (বিধবা ও অসবর্ণ বিবাহের স্বীকৃতি ও বাল্য বিবাহের বিরোধীতা) পাস হয় এবং 1880 খ্রিস্টাব্দে 'নববিধান সমাজ' গঠিত হয়।
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'আদি ব্রাহ্মসমাজের' প্রবর্তক ছিলেন। 1831 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ধর্ম তত্ত্ব আলোচনার জন্য 'সর্বতত্ত্বদীপিকা সভা' গঠন করেন, যা পরে 'তত্ত্ববোধিনী সভা' নামে পরিচিত হয়। রাধাকান্ত দেব এর সহযোগিতায় 1846 খ্রিস্টাব্দে 'হিন্দু হিতার্থী' নামে এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন (খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরিতকরণের বিরুদ্ধে)। 1851 খ্রীস্টাব্দে 'ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন' এর সম্পাদক হন। 1859 খ্রিস্টাব্দে 'হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ' ও 'ব্রাহ্ম বিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেন।
• রামকৃষ্ণ মিশন : স্বামী বিবেকানন্দ 1897 খ্রিস্টাব্দে 1 লা মে 'রামকৃষ্ণ মিশন' এবং 1898 খ্রিস্টাব্দে 9 ই ডিসেম্বর বেলুড়ে 'শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ' প্রতিষ্ঠা করেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে রামকৃষ্ণ মিশন সমাজ সংস্কার ও শিক্ষার বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
• মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কার আন্দোলন :
• পরমহংস মন্ডলী : 1840 সালে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরে 'পরমহংস মন্ডলী' নামে এক সংস্থা প্রথম সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। 'লোকহিতবাদী' নামে পরিচিত গোপাল হরি দেশমুখ ছিলেন 'পশ্চিম ভারতের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের জনক' ।
• প্রার্থনা সমাজ : 1867 সালে বোম্বাই শহরে ড: আত্মারাম পান্ডুরঙ্গের নেতৃত্বে 'প্রার্থনা সমাজ' গড়ে ওঠে। বিচারপতি মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রার্থনা সমাজের প্রাণপুরুষ ছিলেন। রানাডে 1861 সালে 'বিধবা বিবাহ সমিতি' (widow marriage Association) গঠন করেন। 1870 সালে 'পুনা সর্বজনিন সভা' গঠন করেন। শিক্ষার অগ্রগতির জন্য 1884 সালে 'দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ' (Deccan Education Society) গড়ে তোলেন। 1887 সালে রানাডে 'জাতীয় সমাজিক সম্মেলন' (National social conference) করেন। স্ত্রীর শিক্ষার বিস্তার, অসবর্ণ বিবাহ ও বিধবা বিবাহ সমর্থন প্রভৃতি ছিল প্রার্থনা সমাজের প্রধান কর্মসূচি।
• পারসি সম্প্রদায় : 1851 সালে ইংরেজি শিক্ষিত তরুণ পারসিরা গড়ে তোলেন 'রনুমাই মাজদায়সনান সভা' (Reform Association)। ধর্মগুরু জরাথ্রুস্ট প্রচারিত ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষা ছিল এই সবার কাজ। বেহরামজি মেরওয়ানজি মালাবারি নামে এক পারসিক বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তার চেষ্টায় 1891 সালে 'সম্মতি আইন' (Age of Consent Act) পাস হয়। এই আইনে মেয়েদের বিবাহের বয়স বারোর উর্ধ্বে স্থির করা হয়।
• পাঞ্জাবে সমাজ সংস্কার আন্দোলন :
• দয়ানন্দ সরস্বতী : 1875 খ্রিস্টাব্দে দয়ানন্দ সরস্বতী পাঞ্জাবে 'আর্য সমাজ' প্রতিষ্ঠা করেন। গুজরাটের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং একজন সংস্কৃত পন্ডিত ছিলেন। হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের জন্য এই সমাজ গড়ে তোলেন। তিনি বিধর্মী হিন্দুদের দীক্ষা দিয়ে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য 'শুদ্ধি আন্দোলন' শুরু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন “বৈদিক শাস্ত্রে ফিরে যাও” ()। 'সত্যার্থ প্রকাশ' ও 'বেদভাষ্য' গ্রন্থদ্বয় রচনা করে তিনি তার আন্দোলনকে সর্বাত্তক করে তুলেছিলেন।
• স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতীর অনুগামী লালা হংসরাজ 1886 খ্রিস্টাব্দে লাহোরে ‘দয়ানন্দ অ্যাংলো বৈদিক কলেজ' প্রতিষ্ঠা করেন এবং 1902 খ্রিস্টাব্দে তার অপর অনুগামী স্বামী শ্রদ্ধানন্দ হরিদ্বারে ‘গুরুকুল আশ্রম' প্রতিষ্ঠা করেন।
• শিখ ধর্মের বিশুদ্ধকরণের জন্য বাবা দয়াল সিং-এর ‘নিরংকারি’ ও বাবা রাম সিংহের ‘নামধারী’ আন্দোলন দ্বয়ও জনপ্রিয় হয়েছিল।
• সিংহ সভা : উনিশ শতকের শেষদিকে অমৃতসর ও লাহোরে সিংহ সভা নামে একটি সংঘ গড়ে ওঠে। এই সংঘের উদ্যোগে সর্বপ্রথম শিখদের মধ্যে ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়।
• অকালি আন্দোলন : শিখ গুরুদ্বার গুলি থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত মহান্তদের অপসারণের জন্য 1921 খ্রিস্টাব্দে অকালিরা আন্দোলন শুরু করে এবং এর ফলে সরকার 1922 খ্রিস্টাব্দে ‘শিখ গুরদ্বার আইন' প্রবর্তন করে দুর্নীতিগ্রস্ত মহান্তদের অপসারিত করে।
• সৈয়দ আহমেদ : ‘মুসলিমদের ত্রাণকর্তা' নামে পরিচিত সৈয়দ আহমেদ ভারতে প্রথম ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব' প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি নরমপন্থী কংগ্রেসী আন্দোলনকে ‘অস্ত্রবিহীন গৃহযুদ্ধ' বলেছিলেন। আলীগড় আন্দোলন কালে 1877 সালে ‘আলীগড় মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ', 1865 সালে ‘অনুবাদ সমিতি', 1866 সালে ‘বিজ্ঞান সমিতি' এবং ‘পেট্রিয়টিক অ্যাসোসিয়েশন' ইত্যাদি গঠন করেন। তিনি ‘তাহজিব-উল-আকলার্ক', ‘পাইয়োনিয়ার’ এবং ‘আলীগড় ইনস্টিটিউট গেজেট' প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন।
• থিয়োসফিক্যাল সোসাইটি : 1886 খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের অ্যাডিয়ারে কর্নেল ওলকট ও মাদাম ব্লাভাটস্কি নামে দুই মার্কিন অধিবাসী ‘থিয়োসফিক্যাল সোসাইটি' গঠন করেন। 1893 খ্রিস্টাব্দে ফোবিয়ান মতাদর্শে বিশ্বাসী থিয়োসফিস্ট শ্রীমতি অ্যানিবেসান্ত এর কর্ণধার হন।
• ডিরোজিও : ডেভিড ড্রুমণ্ড সাহেবের কৃতি ছাত্র লুই হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেছিলেন তার নাম নব্য বঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ডিরোজিও ভারতবর্ষকে জন্মভূমির মত ভালোবাসতেন বলে ‘To India- my native land' কবিতাটি লিখেছিলেন। টমপেনের 'Age of Reason' বইটি তার ছাত্ররা বাইবেল বলে মনে করত। 1827 খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিও তার এন্টালির বাসভবনে প্লেটোর 'ডেমোট্রেজ' সভার আদলে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলেন। প্যারীচাঁদ মিত্র রাধানাথ শিকদার রামতনু লাহিড়ী কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রভৃতি তার অনুগামী ছিলেন। তিনি পার্থেনন, হেসপেরাস, ক্যালকাটা লিটারেরি গেজেট, ক্যালকাটা ম্যাগাজিন, ইন্ডিয়ান ম্যাগাজিন, বেঙ্গল অ্যানুয়াল, ক্যালেইডে-স্কোপ, এনকোয়ারার, জ্ঞানান্বেষণ প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন।
• ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : বিদ্যাসাগর 1855 খ্রিস্টাব্দে ‘পরাশর সংহিতা’র ব্যাখ্যা করে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়নের জন্য এক হাজার মানুষের সই সম্বলিত আবেদনপত্র সরকারকে জমা দেন। 1856 খ্রিষ্টাব্দে 16 জুলাই লর্ড ক্যানিং বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন করেন। ওই বছর 24 পরগনা জেলার খাঁটুয়া গ্রামের শ্রীশচন্দ্র (ব্যানার্জি) বিদ্যারত্ন কে কলকাতার 12 সুকিয়া স্ট্রিটে 10 বছরের কালিমতী নামে এক বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন। নিজ পূত্র নারায়ণকে ভবসুন্দরী নামে এক অষ্টাদশী বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন। বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় 1860 খ্রিস্টাব্দে আর একটি আইন পাস হয় যার দ্বারা মেয়েদের বিবাহের নূন্যতম বয়স 10 বছর ধার্য হয়। নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য মোট 35 টি বালিকা বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন। নারীদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ড্রিংকওয়াটার বেথুনের সঙ্গে মিলিতভাবে বেথুন স্কুল ও কলেজ তৈরি করেছিলেন। তিনি বর্ণপরিচয়, বোধোদয়, কথামালা, সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস, বেতাল পঞ্চবিংশতি ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর নিজের খরচে কলকাতায় 'মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন' (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) তৈরি করেন।
• কেশব চন্দ্র সেন : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কেশব চন্দ্র সেন এর বৈপ্লবিক চিন্তাধারার বিরোধ বাধলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ব্রাহ্মসমাজের আচার্য পদ থেকে বহিষ্কার করেন। ফলে 1866 খ্রিস্টাব্দের কেশব চন্দ্র সেন 'ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ' গঠন করেন। 1869 খ্রিস্টাব্দে মন্দির মসজিদ ও গির্জার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে 'ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম মন্দির' গঠন করেন। 1872 খ্রিস্টাব্দে তার চেষ্টায় 'তিন আইন' (বিধবা ও অসবর্ণ বিবাহের স্বীকৃতি ও বাল্য বিবাহের বিরোধীতা) পাস হয় এবং 1880 খ্রিস্টাব্দে 'নববিধান সমাজ' গঠিত হয়।
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'আদি ব্রাহ্মসমাজের' প্রবর্তক ছিলেন। 1831 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ধর্ম তত্ত্ব আলোচনার জন্য 'সর্বতত্ত্বদীপিকা সভা' গঠন করেন, যা পরে 'তত্ত্ববোধিনী সভা' নামে পরিচিত হয়। রাধাকান্ত দেব এর সহযোগিতায় 1846 খ্রিস্টাব্দে 'হিন্দু হিতার্থী' নামে এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন (খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরিতকরণের বিরুদ্ধে)। 1851 খ্রীস্টাব্দে 'ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন' এর সম্পাদক হন। 1859 খ্রিস্টাব্দে 'হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ' ও 'ব্রাহ্ম বিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেন।
• রামকৃষ্ণ মিশন : স্বামী বিবেকানন্দ 1897 খ্রিস্টাব্দে 1 লা মে 'রামকৃষ্ণ মিশন' এবং 1898 খ্রিস্টাব্দে 9 ই ডিসেম্বর বেলুড়ে 'শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ' প্রতিষ্ঠা করেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে রামকৃষ্ণ মিশন সমাজ সংস্কার ও শিক্ষার বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
• মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কার আন্দোলন :
• পরমহংস মন্ডলী : 1840 সালে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরে 'পরমহংস মন্ডলী' নামে এক সংস্থা প্রথম সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। 'লোকহিতবাদী' নামে পরিচিত গোপাল হরি দেশমুখ ছিলেন 'পশ্চিম ভারতের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের জনক' ।
• প্রার্থনা সমাজ : 1867 সালে বোম্বাই শহরে ড: আত্মারাম পান্ডুরঙ্গের নেতৃত্বে 'প্রার্থনা সমাজ' গড়ে ওঠে। বিচারপতি মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রার্থনা সমাজের প্রাণপুরুষ ছিলেন। রানাডে 1861 সালে 'বিধবা বিবাহ সমিতি' (widow marriage Association) গঠন করেন। 1870 সালে 'পুনা সর্বজনিন সভা' গঠন করেন। শিক্ষার অগ্রগতির জন্য 1884 সালে 'দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ' (Deccan Education Society) গড়ে তোলেন। 1887 সালে রানাডে 'জাতীয় সমাজিক সম্মেলন' (National social conference) করেন। স্ত্রীর শিক্ষার বিস্তার, অসবর্ণ বিবাহ ও বিধবা বিবাহ সমর্থন প্রভৃতি ছিল প্রার্থনা সমাজের প্রধান কর্মসূচি।
• পারসি সম্প্রদায় : 1851 সালে ইংরেজি শিক্ষিত তরুণ পারসিরা গড়ে তোলেন 'রনুমাই মাজদায়সনান সভা' (Reform Association)। ধর্মগুরু জরাথ্রুস্ট প্রচারিত ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষা ছিল এই সবার কাজ। বেহরামজি মেরওয়ানজি মালাবারি নামে এক পারসিক বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তার চেষ্টায় 1891 সালে 'সম্মতি আইন' (Age of Consent Act) পাস হয়। এই আইনে মেয়েদের বিবাহের বয়স বারোর উর্ধ্বে স্থির করা হয়।
• পাঞ্জাবে সমাজ সংস্কার আন্দোলন :
• দয়ানন্দ সরস্বতী : 1875 খ্রিস্টাব্দে দয়ানন্দ সরস্বতী পাঞ্জাবে 'আর্য সমাজ' প্রতিষ্ঠা করেন। গুজরাটের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং একজন সংস্কৃত পন্ডিত ছিলেন। হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের জন্য এই সমাজ গড়ে তোলেন। তিনি বিধর্মী হিন্দুদের দীক্ষা দিয়ে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য 'শুদ্ধি আন্দোলন' শুরু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন “বৈদিক শাস্ত্রে ফিরে যাও” ()। 'সত্যার্থ প্রকাশ' ও 'বেদভাষ্য' গ্রন্থদ্বয় রচনা করে তিনি তার আন্দোলনকে সর্বাত্তক করে তুলেছিলেন।
• স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতীর অনুগামী লালা হংসরাজ 1886 খ্রিস্টাব্দে লাহোরে ‘দয়ানন্দ অ্যাংলো বৈদিক কলেজ' প্রতিষ্ঠা করেন এবং 1902 খ্রিস্টাব্দে তার অপর অনুগামী স্বামী শ্রদ্ধানন্দ হরিদ্বারে ‘গুরুকুল আশ্রম' প্রতিষ্ঠা করেন।
• শিখ ধর্মের বিশুদ্ধকরণের জন্য বাবা দয়াল সিং-এর ‘নিরংকারি’ ও বাবা রাম সিংহের ‘নামধারী’ আন্দোলন দ্বয়ও জনপ্রিয় হয়েছিল।
• সিংহ সভা : উনিশ শতকের শেষদিকে অমৃতসর ও লাহোরে সিংহ সভা নামে একটি সংঘ গড়ে ওঠে। এই সংঘের উদ্যোগে সর্বপ্রথম শিখদের মধ্যে ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়।
• অকালি আন্দোলন : শিখ গুরুদ্বার গুলি থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত মহান্তদের অপসারণের জন্য 1921 খ্রিস্টাব্দে অকালিরা আন্দোলন শুরু করে এবং এর ফলে সরকার 1922 খ্রিস্টাব্দে ‘শিখ গুরদ্বার আইন' প্রবর্তন করে দুর্নীতিগ্রস্ত মহান্তদের অপসারিত করে।
• সৈয়দ আহমেদ : ‘মুসলিমদের ত্রাণকর্তা' নামে পরিচিত সৈয়দ আহমেদ ভারতে প্রথম ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব' প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি নরমপন্থী কংগ্রেসী আন্দোলনকে ‘অস্ত্রবিহীন গৃহযুদ্ধ' বলেছিলেন। আলীগড় আন্দোলন কালে 1877 সালে ‘আলীগড় মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ', 1865 সালে ‘অনুবাদ সমিতি', 1866 সালে ‘বিজ্ঞান সমিতি' এবং ‘পেট্রিয়টিক অ্যাসোসিয়েশন' ইত্যাদি গঠন করেন। তিনি ‘তাহজিব-উল-আকলার্ক', ‘পাইয়োনিয়ার’ এবং ‘আলীগড় ইনস্টিটিউট গেজেট' প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন।
• থিয়োসফিক্যাল সোসাইটি : 1886 খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের অ্যাডিয়ারে কর্নেল ওলকট ও মাদাম ব্লাভাটস্কি নামে দুই মার্কিন অধিবাসী ‘থিয়োসফিক্যাল সোসাইটি' গঠন করেন। 1893 খ্রিস্টাব্দে ফোবিয়ান মতাদর্শে বিশ্বাসী থিয়োসফিস্ট শ্রীমতি অ্যানিবেসান্ত এর কর্ণধার হন।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.