• অসহযোগ আন্দোলন : স্বায়ত্তশাসন লাভের আশায় গান্ধীজির নির্দেশে 12¹/2 লক্ষ্য ভারতীয় সেনা প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং 10 হাজার ভারতীয় সেনা মৃত্যু বরণ করে। যুদ্ধ তহবিলে ভারতবাসী 6 লক্ষ্য 21 হাজার পাউন্ড টাকা দান করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার ভারতবাসীকে হতাশ করে। রওলাট আইন, জলিয়ানওয়ালাবাগ হত্যা কান্ডের প্রতিবাদ, খিলাফত আন্দোলনের সমর্থন প্রভৃতি ঘটনা আলোচনার জন্য 1920 খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে লালা লাজপৎ রায়ের সভাপতিত্বে কলকাতায় কংগ্ৰেসের বিশেষ অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে গান্ধীজি ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ পরিকল্পনা পেশ করেন এবং 'স্বরাজ'কে আন্দোলনের লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। চিত্তরঞ্জন দাস, লালা লাজপত রায়, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখের বিরোধিতা সত্ত্বেও গান্ধীজীর প্রস্তাব পাস হয়। ছাত্র,শিক্ষক,উকিল,শ্রমিক সমাজের সকল স্তরের মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দেয়। চরকা ছিল আন্দোলনের প্রতীক। গান্ধীজির নির্দেশে 20 লক্ষ্য চরকা বিতরণ করা হয়েছিল। 1921 খ্রিস্টাব্দের 13 ই নভেম্বর ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অফ ওয়েলস প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ভারতীয়রা ইংরেজদের সাহায্য করায় ধন্যবাদঞাপক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বোম্বে এলে সারা দেশে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ শুরু হয়।
• চৌরিচৌরার ঘটনা : 1922 খ্রিস্টাব্দে 5ই ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নিসংযোগ করলে 22 জন পুলিশের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা চৌরিচৌরা ঘটনা নামে পরিচিত। এই ঘটনায় মর্মাহত গান্ধীজি 25 শে ফেব্রুয়ারী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
• স্বরাজ্য দল : চিত্তরঞ্জন দাস ও মতিলাল নেহেরু গান্ধীজির অসহযোগ নীতির পরিবর্তে 1919 খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার অনুসারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, আইন সভায় উপস্থিত হয়ে প্রতি পদে সরকারের সকল কাজে বাধা সৃষ্টি করে শাসন সংস্কারকে বিপর্যস্ত করে দেবার কথা বলেন (“wreck the Reform Act from within”)। হাকিম আজমল খাঁ, বিঠলভাই ভাই প্যাটেল, মদনমোহন মালব্য, শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, কেলকার, জয়াকার, সত্যমূর্তি প্রমূখ নেতৃবৃন্দ এই মতের সমর্থক ছিলেন এবং তারা ‘প্রো-চেঞ্জার' বা ‘পরিবর্তন সমর্থক' নামে পরিচিত ছিলেন। অপরদিকে বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, ডাঃ আনসারী, কে আর আয়েঙ্গার, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী প্রমূখ গান্ধিজীর অসহযোগ নীতির সমর্থকরা ‘নো-চেঞ্জার’ বা ‘পরিবর্তন-বিরোধী’ নামে পরিচিত হন। 1922 খ্রিস্টাব্দে গয়া কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে চিত্তরঞ্জন দাস আইন সভায় প্রবেশ নীতিকে গ্রহণের আহ্বান জানান। বিপুল ভোটে তার এই প্রস্তাব পরিতক্ত হয়। তিনি কংগ্রেস সভাপতির পদত্যাগ করেন এবং 1923 খ্রিস্টাব্দের 1লা জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই ‘কংগ্রেস খিলাফৎ স্বরাজ দল' প্রতিষ্ঠা করেন যা ‘স্বরাজ্য দল' নামে পরিচিত। ঔপনিবেশিক স্বায়ত্ব শাসন লাভ করা এই দলের মূল উদ্দেশ্য ছিল। প্রথম দিকে তারা বিশেষ সাফল্য অর্জন করে। 1925 খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে বিঠলভাই প্যাটেল কেন্দ্রীয় আইন সভার সভাপতি বা স্পিকার নির্বাচিত হন।
• জাতীয় চুক্তিপত্র ও বাংলা চুক্তিপত্র : 1923 থেকে 1926 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন অংশে 72 টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এই সময় দুই সম্প্রদায়ের কিছু নেতা এই সাম্প্রদায়িক বিরোধ মেটাতে সচেষ্ট হন। ড: আনসারি ও লালা লাজপত রায় একটি ‘জাতীয় চুক্তিপত্র' এবং চিত্তরঞ্জন দাস বাংলার জন্য ‘বাংলা চুক্তিপত্র' নামে প্রায় একই ধরনের দুটি চুক্তি পত্রের খসড়া তৈরি করেন। 1923 খ্রিস্টাব্দে কোকনদ কংগ্রেসে এই দুটি চুক্তিপত্র আলোচিত হয়। জাতীয় চুক্তিপত্রটি পুনরায় বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। গান্ধী, মালব্য, লালা লাজপত রায়ের আপত্তিতে ‘বাংলা চুক্তিপত্র' টি বাতিল হয়। ‘বাংলা চুক্তিপত্র’টি 1924 খ্রিস্টাব্দের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের সিরাজগঞ্জ অধিবেশনে পাস হয়।
• মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশন : 1924 খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে মুসলিম লীগের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন এবং মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচক মন্ডলীর ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন। এই অধিবেশন থেকেই কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে ঐক্যে ভাঙ্গন ধরে।
• সাইমন কমিশন : 1919 খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে দশ বছর পর এই আইনের কার্যকারিতা অনুসন্ধানের জন্য একটি রাজকীয় কমিশন গঠনের কথা বলা হয়। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের শাসন সংস্কারের ক্রমাগত দাবিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই 1927 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সাত জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি কমিশন, ভারত দায়িত্বশীল সরকার গঠনের উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধানের জন্য ভারতে আসে। ইংরেজ আইনজীবী এবং উদারপন্থী দলের সাংসদ স্যার জন সাইমন এই কমিশনের প্রধান ছিলেন। ভারতের সংবিধান তৈরীর অধিকার ভারতবাসীর অথচ এই কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য ছিল না, এজন্য সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। 1928 খ্রিস্টাব্দের 30 শে অক্টোবর লাহোরে সাইমন কমিশন বিরোধী মিছিল পরিচালনার সময় লালা লাজপত রায় পুলিশ কর্তৃক প্রহূত হন এবং 17 ই নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। ভারতীয়দের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও 1930 খ্রিস্টাব্দে এই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই 1935 খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন (the Government of India Act 1935) রচিত হয়। সাইমন কমিশন প্রশ্নে মুসলিম লীগ দু টুকরো হয়ে যায়। জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন অংশ মৌলবী মহম্মদ ইয়াকুবের সভাপতিত্বে কলকাতায় মিলিত হয়ে কমিশন বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অপরদিকে ‘পাঞ্জাব গোষ্ঠী' নামে পরিচিত স্যার মোহাম্মদ শফি, ফিরোজ খাঁ নুন, ফজলি হোসেন ও স্যার মহম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে একদল লাহোরে মহম্মদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সাইমন কমিশন কে স্বাগত জানায়।
• কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশন : ভারতের সংবিধান রচনার জন্য কেবলমাত্র ইংরেজদের নিয়ে সাইমন কমিশন গঠিত হয়। ভারত সচিব বার্কেনহেড সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর যোগ্য জবাব দেবার জন্য 1927 খ্রিস্টাব্দে 27 শে ডিসেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে সর্বদলের গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনার প্রস্তাব গৃহীত হয়। সুভাষচন্দ্র বসু ও জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়।
• নেহরু রিপোর্ট : সর্বদলের গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনায় উদ্দেশ্যে 1928 খ্রিস্টাব্দের 12 ই ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতা এম এ আনসারীর নেতৃত্বে দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির উপর সংবিধান রচনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ওই বছর আগস্ট মাসে সর্বদলীয় সম্মেলনের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে মতিলাল নেহেরু সংবিধানের খসড়া পেশ করেন। এই খসড়া নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত। এই রিপোর্টে ভারতের জন্য ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস বা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে স্বায়ত্তশাসনের দাবি করা হয়। মুসলিম লীগ, শিখ, হিন্দু মহাসভা ও অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায় এই রিপোর্টের বিরোধিতা করে। 1928 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহক সমিতি এই রিপোর্টের প্রস্তাবগুলি কে সমর্থন করলে নেহেরু কংগ্রেসের সচিব পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে একত্রে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ' গঠন করে ‘পূর্ণ স্বাধীনতার' পক্ষে প্রচারে নামেন।
• নিখিল ভারত মুসলিম সম্মেলন : 1929 খ্রিস্টাব্দের 1লা জানুয়ারি ভারতীয় মুসলিমদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সাংবিধানিক সুযোগ-সুবিধা আদায় করার জন্য দিল্লিতে ‘নিখিল ভারত মুসলিম সম্মেলন' এর অধিবেশন বসে। এই সময় আলী ভাতৃদ্বয় কানপুরে ‘জামিয়াৎ-ই-উলেমা-ই-হিন্দ' নামে একটি কংগ্রেস-বিরোধী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
• জাতীয়তাবাদী মুসলিম সংগঠন : নিখিল ভারত মুসলিম সম্মেলনের কংগ্রেস বিরোধী নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ব্রেলভী, ইউসুফ, মেহের আলী প্রমূখ জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতারা 1929 খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ‘কংগ্রেস মুসলিম দল' গঠন করেন। ডঃ আনসারী 1928 খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয়তাবাদী মুসলিম দল' প্রতিষ্ঠা করেন। মৌলানা আজাদ ‘নিখিল ভারত মুসলিম জাতীয়তাবাদী দল' গঠন করেন।
• জিন্নার চৌদ্দ দফা দাবি : 1929 খ্রিস্টাব্দের 28 শে মার্চ দিল্লিতে মুসলিম লীগের সম্মেলন বসে। এই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন আলী জিন্নাহ। এই অধিবেশনে তিনি তার বিখ্যাত ‘চৌদ্দ দফা দাবি' পেশ করেন।
• লর্ড আরউইনের ঘোষণা : 1929 খ্রিস্টাব্দে 31 অক্টোবর বড়লাট লর্ড আরউইন একটি ঘোষণাপত্র জারি করে বলেন ভারতকে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করাই সরকারের লক্ষ্য। সাইমন কমিশনের রিপোর্ট পেশ হলে নতুন সংবিধানের ব্যাপারে আলোচনার জন্য লন্ডনে ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে একটি গোলটেবিল বৈঠকে আহ্বান করা হবে। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে বিরাট প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রক্ষণশীল নেতা উইনস্টন চার্চিল বাধা প্রদান করেন।
• লাহোর কংগ্রেস : 1929 খ্রিস্টাব্দে 23 ডিসেম্বর কংগ্রেসের এই লাহোর অধিবেশনে গান্ধীজীর অনুরোধে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু সভাপতি নিযুক্ত হন। জহরলাল নেহেরু লাহোর কংগ্রেসে ‘নেহরু রিপোর্ট' এ উল্লিখিত ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’ এর দাবিত্যাগ করে ‘পূর্ণ স্বরাজ' বা ‘পূর্ণ স্বাধীনতার' দাবি করেন। হাজার হাজার কংগ্রেস সদস্য শীত উপেক্ষা করে 31 ডিসেম্বর 1929 খ্রিস্টাব্দে রাত্রি 12 টার সময় লাহোরের রাভি নদীর তীরে কংগ্রেসের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্দেশমতো ও জহরলাল নেহেরু সিদ্ধান্ত অনুসারে 1930 খ্রিস্টাব্দে 26 শে জানুয়ারি দেশজুড়ে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।
• চৌরিচৌরার ঘটনা : 1922 খ্রিস্টাব্দে 5ই ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নিসংযোগ করলে 22 জন পুলিশের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা চৌরিচৌরা ঘটনা নামে পরিচিত। এই ঘটনায় মর্মাহত গান্ধীজি 25 শে ফেব্রুয়ারী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
• স্বরাজ্য দল : চিত্তরঞ্জন দাস ও মতিলাল নেহেরু গান্ধীজির অসহযোগ নীতির পরিবর্তে 1919 খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার অনুসারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, আইন সভায় উপস্থিত হয়ে প্রতি পদে সরকারের সকল কাজে বাধা সৃষ্টি করে শাসন সংস্কারকে বিপর্যস্ত করে দেবার কথা বলেন (“wreck the Reform Act from within”)। হাকিম আজমল খাঁ, বিঠলভাই ভাই প্যাটেল, মদনমোহন মালব্য, শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, কেলকার, জয়াকার, সত্যমূর্তি প্রমূখ নেতৃবৃন্দ এই মতের সমর্থক ছিলেন এবং তারা ‘প্রো-চেঞ্জার' বা ‘পরিবর্তন সমর্থক' নামে পরিচিত ছিলেন। অপরদিকে বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, ডাঃ আনসারী, কে আর আয়েঙ্গার, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী প্রমূখ গান্ধিজীর অসহযোগ নীতির সমর্থকরা ‘নো-চেঞ্জার’ বা ‘পরিবর্তন-বিরোধী’ নামে পরিচিত হন। 1922 খ্রিস্টাব্দে গয়া কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে চিত্তরঞ্জন দাস আইন সভায় প্রবেশ নীতিকে গ্রহণের আহ্বান জানান। বিপুল ভোটে তার এই প্রস্তাব পরিতক্ত হয়। তিনি কংগ্রেস সভাপতির পদত্যাগ করেন এবং 1923 খ্রিস্টাব্দের 1লা জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই ‘কংগ্রেস খিলাফৎ স্বরাজ দল' প্রতিষ্ঠা করেন যা ‘স্বরাজ্য দল' নামে পরিচিত। ঔপনিবেশিক স্বায়ত্ব শাসন লাভ করা এই দলের মূল উদ্দেশ্য ছিল। প্রথম দিকে তারা বিশেষ সাফল্য অর্জন করে। 1925 খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে বিঠলভাই প্যাটেল কেন্দ্রীয় আইন সভার সভাপতি বা স্পিকার নির্বাচিত হন।
• জাতীয় চুক্তিপত্র ও বাংলা চুক্তিপত্র : 1923 থেকে 1926 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন অংশে 72 টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এই সময় দুই সম্প্রদায়ের কিছু নেতা এই সাম্প্রদায়িক বিরোধ মেটাতে সচেষ্ট হন। ড: আনসারি ও লালা লাজপত রায় একটি ‘জাতীয় চুক্তিপত্র' এবং চিত্তরঞ্জন দাস বাংলার জন্য ‘বাংলা চুক্তিপত্র' নামে প্রায় একই ধরনের দুটি চুক্তি পত্রের খসড়া তৈরি করেন। 1923 খ্রিস্টাব্দে কোকনদ কংগ্রেসে এই দুটি চুক্তিপত্র আলোচিত হয়। জাতীয় চুক্তিপত্রটি পুনরায় বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। গান্ধী, মালব্য, লালা লাজপত রায়ের আপত্তিতে ‘বাংলা চুক্তিপত্র' টি বাতিল হয়। ‘বাংলা চুক্তিপত্র’টি 1924 খ্রিস্টাব্দের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের সিরাজগঞ্জ অধিবেশনে পাস হয়।
• মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশন : 1924 খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে মুসলিম লীগের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন এবং মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচক মন্ডলীর ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন। এই অধিবেশন থেকেই কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে ঐক্যে ভাঙ্গন ধরে।
• সাইমন কমিশন : 1919 খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে দশ বছর পর এই আইনের কার্যকারিতা অনুসন্ধানের জন্য একটি রাজকীয় কমিশন গঠনের কথা বলা হয়। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের শাসন সংস্কারের ক্রমাগত দাবিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই 1927 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সাত জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি কমিশন, ভারত দায়িত্বশীল সরকার গঠনের উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধানের জন্য ভারতে আসে। ইংরেজ আইনজীবী এবং উদারপন্থী দলের সাংসদ স্যার জন সাইমন এই কমিশনের প্রধান ছিলেন। ভারতের সংবিধান তৈরীর অধিকার ভারতবাসীর অথচ এই কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য ছিল না, এজন্য সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। 1928 খ্রিস্টাব্দের 30 শে অক্টোবর লাহোরে সাইমন কমিশন বিরোধী মিছিল পরিচালনার সময় লালা লাজপত রায় পুলিশ কর্তৃক প্রহূত হন এবং 17 ই নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। ভারতীয়দের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও 1930 খ্রিস্টাব্দে এই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই 1935 খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন (the Government of India Act 1935) রচিত হয়। সাইমন কমিশন প্রশ্নে মুসলিম লীগ দু টুকরো হয়ে যায়। জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন অংশ মৌলবী মহম্মদ ইয়াকুবের সভাপতিত্বে কলকাতায় মিলিত হয়ে কমিশন বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অপরদিকে ‘পাঞ্জাব গোষ্ঠী' নামে পরিচিত স্যার মোহাম্মদ শফি, ফিরোজ খাঁ নুন, ফজলি হোসেন ও স্যার মহম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে একদল লাহোরে মহম্মদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সাইমন কমিশন কে স্বাগত জানায়।
• কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশন : ভারতের সংবিধান রচনার জন্য কেবলমাত্র ইংরেজদের নিয়ে সাইমন কমিশন গঠিত হয়। ভারত সচিব বার্কেনহেড সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর যোগ্য জবাব দেবার জন্য 1927 খ্রিস্টাব্দে 27 শে ডিসেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে সর্বদলের গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনার প্রস্তাব গৃহীত হয়। সুভাষচন্দ্র বসু ও জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়।
• নেহরু রিপোর্ট : সর্বদলের গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনায় উদ্দেশ্যে 1928 খ্রিস্টাব্দের 12 ই ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতা এম এ আনসারীর নেতৃত্বে দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির উপর সংবিধান রচনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ওই বছর আগস্ট মাসে সর্বদলীয় সম্মেলনের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে মতিলাল নেহেরু সংবিধানের খসড়া পেশ করেন। এই খসড়া নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত। এই রিপোর্টে ভারতের জন্য ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস বা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে স্বায়ত্তশাসনের দাবি করা হয়। মুসলিম লীগ, শিখ, হিন্দু মহাসভা ও অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায় এই রিপোর্টের বিরোধিতা করে। 1928 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহক সমিতি এই রিপোর্টের প্রস্তাবগুলি কে সমর্থন করলে নেহেরু কংগ্রেসের সচিব পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে একত্রে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ' গঠন করে ‘পূর্ণ স্বাধীনতার' পক্ষে প্রচারে নামেন।
• নিখিল ভারত মুসলিম সম্মেলন : 1929 খ্রিস্টাব্দের 1লা জানুয়ারি ভারতীয় মুসলিমদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সাংবিধানিক সুযোগ-সুবিধা আদায় করার জন্য দিল্লিতে ‘নিখিল ভারত মুসলিম সম্মেলন' এর অধিবেশন বসে। এই সময় আলী ভাতৃদ্বয় কানপুরে ‘জামিয়াৎ-ই-উলেমা-ই-হিন্দ' নামে একটি কংগ্রেস-বিরোধী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
• জাতীয়তাবাদী মুসলিম সংগঠন : নিখিল ভারত মুসলিম সম্মেলনের কংগ্রেস বিরোধী নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ব্রেলভী, ইউসুফ, মেহের আলী প্রমূখ জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতারা 1929 খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ‘কংগ্রেস মুসলিম দল' গঠন করেন। ডঃ আনসারী 1928 খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয়তাবাদী মুসলিম দল' প্রতিষ্ঠা করেন। মৌলানা আজাদ ‘নিখিল ভারত মুসলিম জাতীয়তাবাদী দল' গঠন করেন।
• জিন্নার চৌদ্দ দফা দাবি : 1929 খ্রিস্টাব্দের 28 শে মার্চ দিল্লিতে মুসলিম লীগের সম্মেলন বসে। এই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন আলী জিন্নাহ। এই অধিবেশনে তিনি তার বিখ্যাত ‘চৌদ্দ দফা দাবি' পেশ করেন।
• লর্ড আরউইনের ঘোষণা : 1929 খ্রিস্টাব্দে 31 অক্টোবর বড়লাট লর্ড আরউইন একটি ঘোষণাপত্র জারি করে বলেন ভারতকে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করাই সরকারের লক্ষ্য। সাইমন কমিশনের রিপোর্ট পেশ হলে নতুন সংবিধানের ব্যাপারে আলোচনার জন্য লন্ডনে ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে একটি গোলটেবিল বৈঠকে আহ্বান করা হবে। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে বিরাট প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রক্ষণশীল নেতা উইনস্টন চার্চিল বাধা প্রদান করেন।
• লাহোর কংগ্রেস : 1929 খ্রিস্টাব্দে 23 ডিসেম্বর কংগ্রেসের এই লাহোর অধিবেশনে গান্ধীজীর অনুরোধে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু সভাপতি নিযুক্ত হন। জহরলাল নেহেরু লাহোর কংগ্রেসে ‘নেহরু রিপোর্ট' এ উল্লিখিত ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’ এর দাবিত্যাগ করে ‘পূর্ণ স্বরাজ' বা ‘পূর্ণ স্বাধীনতার' দাবি করেন। হাজার হাজার কংগ্রেস সদস্য শীত উপেক্ষা করে 31 ডিসেম্বর 1929 খ্রিস্টাব্দে রাত্রি 12 টার সময় লাহোরের রাভি নদীর তীরে কংগ্রেসের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্দেশমতো ও জহরলাল নেহেরু সিদ্ধান্ত অনুসারে 1930 খ্রিস্টাব্দে 26 শে জানুয়ারি দেশজুড়ে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.