• জাতীয় কংগ্রেস : 1885 খ্রিস্টাব্দে অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন। 1885 খ্রিস্টাব্দের 28 ডিসেম্বর বোম্বের গোকুলদাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে 72 জন প্রতিনিধির মধ্যে ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন। প্রথমদিকে কংগ্রেস এর উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ হলেন – সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, ফিরোজশাহ মেহেতা, দাদাভাই নওরোজি, আনন্দ চার্লু, আনন্দমোহন বসু, দীনশা ওয়াচা, রমেশচন্দ্র দত্ত, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, মদনমোহন মালব্য, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে। এছাড়া কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি শ্রীমতি অ্যানি বেসান্ত এবং কংগ্রেসের প্রথম মুসলিম সভাপতি বদরুদ্দিন তায়েবজি। ইতিহাসে এরা ‘নরমপন্থী’ নামে পরিচিত।
• বঙ্গভঙ্গ : রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন বাঙালিকে দুর্বল করে সমগ্র ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে 1905 খ্রিস্টাব্দে 20 জুলাই লর্ড কার্জন সরকারিভাবে ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। মালদহ জেলা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী ও পার্বত্য ত্রিপুরা ও আসাম কে একত্রিত করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ (এর রাজধানী ঢাকা) এবং পশ্চিমবঙ্গ বিহার ও উড়িষ্যার বাকি অংশ নিয়ে ‘বাংলা প্রদেশ' (এর রাজধানী কলকাতা) গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
• বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গের দিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'রাখি বন্ধন উৎসব' পালন করেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর প্রস্তাবে সেদিন সারাদেশে 'অরন্ধন উৎসব' পালিত হয়। ঐদিন অপরাহ্নে আপার সার্কুলার রোডে 50 হাজার লোকের উপস্থিতিতে অসুস্থ আনন্দমোহন বসুর সভাপতিত্বে উভয় বাংলার ঐক্যের প্রতীক 'মিলন মন্দির' বা 'ফেডারেশন হল' এর ভিত্তি স্থাপিত হয়।
• বয়কট আন্দোলন : 1905 খ্রিস্টাব্দের 13 ই জুলাই কৃষ্ণ কুমার মিত্র সম্পাদিত সঞ্জীবনী পত্রিকায় সর্বপ্রথম সরকারের বিরুদ্ধে এক সামগ্রিক বয়কট এর কথা ঘোষণা করা হয়। 17ই জুলাই অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি চিঠিতে বিলেতি দ্রব্য বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ক্লথ বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। সুরেন্দ্রনাথ, মতিলাল ঘোষ এবং কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ আন্দোলনের প্রথম পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 16 জুলাই খুলনা জেলার বাগেরহাট শহরে এক বিরাট জনসভায় বয়কট এর প্রস্তাব গৃহীত হয়। 17ই ও 18ই জুলাই কলকাতার রিপন কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ)-এ এক ছাত্র সমাবেশে ছাত্র সমাজ বয়কট-এর শপথ গ্রহণ করে। 31 শে জুলাই কলকাতার সমস্ত কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি' গঠিত হয়। বিদেশি লবণ, চিনি, কাপড়, কাচের চুড়ি, মদ প্রভৃতি বর্জিত হয়।
• স্বদেশী আন্দোলন : স্বদেশী কথার আক্ষরিক অর্থ হলো দেশের জিনিস। স্বদেশী ছিল বয়কট এর পরিপূরক। স্বদেশী শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রির জন্য শহরে ও গ্রামে স্বদেশী দোকান গড়ে ওঠে। স্বদেশী এর আদর্শ সফল করতে ছাত্র যুবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বদেশী পণ্য বিক্রি করে আসতো। এই কাজে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত ‘ডন সোসাইটি'র ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। 1901 খ্রিস্টাব্দে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাকিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিঃ' প্রতিষ্ঠা করেন। ডঃ নীলরতন সরকার এর ‘জাতীয় সাবান কারখানা', জে. এন. টাটার ‘আয়রন এন্ড ষ্টীল কম্পানি', চিদাম্বারাম পিল্লাই এর ‘জাতীয় জাহাজ কম্পানি' ইত্যাদি এই যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়। 1906 খ্রিস্টাব্দে কার্জনের শিক্ষা সচিব সি. আর. কার্লাইল ‘কার্লাইল সার্কুলার' জারি করে আন্দোলনরত বহু ছাত্রকে স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কার করলে সতীশচন্দ্র বসু তাদের জন্য তৈরি করেন ‘এন্টি সার্কুলার সোসাইটি'।
• জাতীয় শিক্ষা পরিষদ : 1905 খ্রিস্টাব্দের 8 নভেম্বর রংপুরে সর্বপ্রথম জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। স্বদেশী আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে 1906 খ্রিস্টাব্দের 11ই মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় 92 জন সদস্য নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ' গঠিত হয়। 14ই আগস্ট এই পরিষদের অধীনে অরবিন্দ ঘোষ কে অধ্যক্ষ করে ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ' প্রতিষ্ঠিত হয়।
• স্বদেশী আন্দোলনে সংবাদপত্রের ভূমিকা : ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা গুলির মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বেঙ্গলি’, মতিলাল ঘোষ সম্পাদিত ‘অমৃতবাজার পত্রিকা', নগেন্দ্রনাথ ঘোষ সম্পাদিত সাপ্তাহিক 'ইন্ডিয়ান নেশন', নরেন্দ্রনাথ সেন সম্পাদিত ‘ইন্ডিয়ান মিরর' এবং অরবিন্দ ঘোষ সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘বন্দেমাতরাম’, ইংরেজি মাসিক পত্রিকা গুলির মধ্যে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর ‘ডন’ ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এর ‘মর্ডান রিভিউ', বাংলা দৈনিক পত্রিকা গুলির মধ্যে ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সন্ধ্যা', বাংলা সাহিত্যিক পত্রিকা গুলির মধ্যে কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ এর ‘হিতবাদী’, জলধর সেন ও দীনেন্দ্রকুমার রায় এর ‘বসুমতি’, যোগেন্দ্র চন্দ্র বসুর ‘বঙ্গবাসী’, কৃষ্ণ কুমার মিত্রের ‘সঞ্জীবনী’, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের ‘স্বরাজ’, মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতার ‘নবশক্তি’ এবং অরবিন্দ পরিচালিত ‘, বাংলা মাসিক পত্রিকা গুলির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ ও ‘ভান্ডার’, সরলা দেবী চৌধুরানী সম্পাদিত ‘ভারতী’, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রবাসী’, সুরেশচন্দ্র সমাজপতির ‘সাহিত্য’, দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরীর ‘নব্য ভারত' ও কুমুদিনী মিত্রের ‘সুপ্রভাত’, বালগঙ্গাধর তিলকের ‘মারাঠা’ ও ‘কেশরী’, বালকৃষ্ণ নারায়ন ফাটক সম্পাদিত মারাঠি সাপ্তাহিক ‘বিহারী’ প্রভৃতি স্বদেশী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• বঙ্গভঙ্গ রদ : সরকার 1911 খ্রিস্টাব্দের 12 ডিসেম্বর কলকাতা থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত রদ করে।
• কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন : জাতীয় কংগ্রেসের সূচনা থেকেই মতাদর্শ ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে নরমপন্থী ও চরমপন্থী নামে দুটি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। 1905 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের বারাণসী অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে গোপালকৃষ্ণ গোখলে বয়কট আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। 1906 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতি দাদাভাই নওরোজি ঘোষণা করেন জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো স্বরাজ লাভ। 1907 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের গন্ডগোলে সভা ভেঙে যায়। চরমপন্থীরা কংগ্রেস থেকে বহিস্কৃত হয়। এই ঘটনা ‘সুরাট বিচ্ছেদ' নামে পরিচিত।
স্বদেশী যুগের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি :
• সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় : সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ও সর্বভারতীয় আন্দোলনে পরিণত হয় এবং তিনি জাতির 'মুকুটহীন রাজা'য় পরিণত হন। লর্ড কার্জন বলেছিলেন “বঙ্গভঙ্গ একটি স্থায়ী ঘটনা” (“the partition of Bengal is a settled fact”)। সুরেন্দ্রনাথ কার্জন কে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন “আমি এই স্থায়ী ঘটনা অস্থায়ী করে দেব” (I will unsettle the settled fact”)। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে 'দেশ নায়ক' হিসেবে অভিহিত করেন। 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 ই অক্টোবর তারই প্রস্তাবে উভয় বঙ্গের মিলনের প্রতীক 'মিলন মন্দির' এর ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আন্দোলনের ব্যয় নির্বাহের জন্য 'জাতীয় ধনভান্ডার' খোলা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে আপোষহীন মনোভাবের জন্য সরকারি মহলে তিনি ‘surrender not Banerjea' নামে পরিচিত ছিলেন।
• রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : 1904 খ্রিস্টাব্দে ‘স্বদেশী সমাজ' নামক এক প্রবন্ধ মারফত রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ শাসন কে সম্পূর্ণ বয়কটের আহ্বান জানান। বঙ্গভঙ্গের দিন কবি নগ্নপদে এক বিরাট মিছিল নিয়ে গঙ্গা স্নান সেরে দুই বঙ্গের মিলনের প্রতীক ‘রাখি বন্ধন’ অনুষ্ঠান পালন করেন। মিলন মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে আনন্দমোহন বসুর ইংরেজি ভাষণ এর বঙ্গানুবাদ তিনি পাঠ করেন। স্বদেশী আন্দোলন কালে ‘জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন' এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের নামে হল্লাবাজি, দুর্বলের উপর অত্যাচার এবং বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য 1908 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকাশ্যে রাজনীতি থেকে সরে যান।
• বিপিনচন্দ্র পাল : বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বিপিনচন্দ্র পাল চরমপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনে সামিল হন। স্বদেশী আন্দোলন উপলক্ষে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেন এবং ‘নিউ ইন্ডিয়া' ও ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকা মারফত দেশবাসীকে আত্মশক্তির বলে স্বাধীনতা অর্জনের আহ্বান জানান। জাতিকে তিনি প্রথম ‘অসহযোগ’ বা ‘নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ' এর মন্ত্রে দীক্ষিত করেন। 1906 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে বিপিনচন্দ্র বিদেশি হস্তক্ষেপ বর্জিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান। 1908 খ্রিস্টাব্দে ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকার মামলা শুরু হলে সরকার সাক্ষী হিসেবে তাকে আদালতে হাজির হতে বলেন। তিনি বিদেশীর আদালতে সাক্ষী দিতে অস্বীকার করলে আদালত অবমাননার দায়ে তার কারাদণ্ড হয়। ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন কে তিনি ‘আধ্যাত্বিক আন্দোলন' বলে মনে করতেন।
• বালগঙ্গাধর তিলক : বালগঙ্গাধর তিলক কেশরী ও মারাঠা পত্রিকা মারফত মহারাষ্ট্রে স্বদেশীর আদর্শকে জনপ্রিয় করে তোলেন। তার আহবানে সাড়া দিয়ে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে। তিনি বলতেন – “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অর্জন করবই” (“Swaraj is my birthright and I must have it”)। 1908 খ্রিস্টাব্দে মজঃফরপুরে ক্ষুদিরামের বোমা বিস্ফোরণের পর তিনি ‘মারাঠা’ ও ‘কেশরী’ পত্রিকায় যেসব প্রবন্ধ লেখেন, সেগুলির বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় এবং তিনি 6 বছরের জন্য সুদূর মান্দালয়ে নির্বাচিত হন।
• লালা লাজপত রায় : ‘পাঞ্জাব কেশরী' লালা লাজপত রায় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করার প্রস্তাব নিয়ে ইংল্যান্ডে যান এবং হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। তার উদ্যোগে পাঞ্জাবে স্বদেশী ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। 1907 খ্রিস্টাব্দে সরকারের শোষণমূলক ভূমি রাজস্ব আইন ও চেনাব (চন্দ্রভাগা) খাল অঞ্চলে অতিরিক্ত সেচ কর এর বিরুদ্ধে তিনি প্রবল কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলন হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠলে 1907 খ্রিস্টাব্দে আন্দোলনের নায়ক হিসেবে তাকে বার্মার মান্দালয় দুর্গে নির্বাসিত করা হয়।
• অরবিন্দ ঘোষ : স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে অরবিন্দ ঘোষ বরোদা কলেজের 750 টাকা বেতনের উপাধ্যক্ষের চাকরি ত্যাগ করে 1906 খ্রিস্টাব্দে বিনা বেতনে কলকাতার ‘জাতীয় কলেজে' অধ্যক্ষের গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 1906 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পত্রিকা মারফত তিনি দেশবাসীকে স্বদেশী ও স্বরাজ এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন। স্বরাজ অর্জনের উপায় হিসেবে ‘নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ' (স্বদেশী ও বয়কট) ও বিপ্লববাদের কথা বলেন। তার নেতৃত্বে মানিকতলা বাগানবাড়িতে ‘যুগান্তর’ দলের প্রধান কর্মকেন্দ্র স্থাপিত হয় এবং বাংলার বুকে বিপ্লববাদী কার্যকলাপ চলতে থাকে। 1908 খ্রিস্টাব্দে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আলিপুর বোমা মামলায় তিনি ধৃত হন। 1910 খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভের পর পন্ডিচেরিতে যোগ সাধনায় মগ্ন হন।
• অশ্বিনীকুমার দত্ত : বরিশালের ‘মুকুটহীন রাজা' অশ্বিনীকুমার দত্তের নেতৃত্বে স্বদেশী আন্দোলন বরিশালে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার প্রতিষ্ঠিত ‘স্বদেশ বান্ধব সমিতি' এবং তার 159 টি শাখা বরিশালে এই আন্দোলন কে সাফল্যমন্ডিত করে তোলে। 1908 খ্রিস্টাব্দে 11 ডিসেম্বর সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে 1910 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লক্ষ্ণৌতে অন্তরীণ করে রাখে।
• বঙ্গভঙ্গ : রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন বাঙালিকে দুর্বল করে সমগ্র ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে 1905 খ্রিস্টাব্দে 20 জুলাই লর্ড কার্জন সরকারিভাবে ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। মালদহ জেলা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী ও পার্বত্য ত্রিপুরা ও আসাম কে একত্রিত করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ (এর রাজধানী ঢাকা) এবং পশ্চিমবঙ্গ বিহার ও উড়িষ্যার বাকি অংশ নিয়ে ‘বাংলা প্রদেশ' (এর রাজধানী কলকাতা) গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
• বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গের দিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'রাখি বন্ধন উৎসব' পালন করেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর প্রস্তাবে সেদিন সারাদেশে 'অরন্ধন উৎসব' পালিত হয়। ঐদিন অপরাহ্নে আপার সার্কুলার রোডে 50 হাজার লোকের উপস্থিতিতে অসুস্থ আনন্দমোহন বসুর সভাপতিত্বে উভয় বাংলার ঐক্যের প্রতীক 'মিলন মন্দির' বা 'ফেডারেশন হল' এর ভিত্তি স্থাপিত হয়।
• বয়কট আন্দোলন : 1905 খ্রিস্টাব্দের 13 ই জুলাই কৃষ্ণ কুমার মিত্র সম্পাদিত সঞ্জীবনী পত্রিকায় সর্বপ্রথম সরকারের বিরুদ্ধে এক সামগ্রিক বয়কট এর কথা ঘোষণা করা হয়। 17ই জুলাই অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি চিঠিতে বিলেতি দ্রব্য বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ক্লথ বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। সুরেন্দ্রনাথ, মতিলাল ঘোষ এবং কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ আন্দোলনের প্রথম পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 16 জুলাই খুলনা জেলার বাগেরহাট শহরে এক বিরাট জনসভায় বয়কট এর প্রস্তাব গৃহীত হয়। 17ই ও 18ই জুলাই কলকাতার রিপন কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ)-এ এক ছাত্র সমাবেশে ছাত্র সমাজ বয়কট-এর শপথ গ্রহণ করে। 31 শে জুলাই কলকাতার সমস্ত কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি' গঠিত হয়। বিদেশি লবণ, চিনি, কাপড়, কাচের চুড়ি, মদ প্রভৃতি বর্জিত হয়।
• স্বদেশী আন্দোলন : স্বদেশী কথার আক্ষরিক অর্থ হলো দেশের জিনিস। স্বদেশী ছিল বয়কট এর পরিপূরক। স্বদেশী শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রির জন্য শহরে ও গ্রামে স্বদেশী দোকান গড়ে ওঠে। স্বদেশী এর আদর্শ সফল করতে ছাত্র যুবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বদেশী পণ্য বিক্রি করে আসতো। এই কাজে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত ‘ডন সোসাইটি'র ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। 1901 খ্রিস্টাব্দে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাকিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিঃ' প্রতিষ্ঠা করেন। ডঃ নীলরতন সরকার এর ‘জাতীয় সাবান কারখানা', জে. এন. টাটার ‘আয়রন এন্ড ষ্টীল কম্পানি', চিদাম্বারাম পিল্লাই এর ‘জাতীয় জাহাজ কম্পানি' ইত্যাদি এই যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়। 1906 খ্রিস্টাব্দে কার্জনের শিক্ষা সচিব সি. আর. কার্লাইল ‘কার্লাইল সার্কুলার' জারি করে আন্দোলনরত বহু ছাত্রকে স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কার করলে সতীশচন্দ্র বসু তাদের জন্য তৈরি করেন ‘এন্টি সার্কুলার সোসাইটি'।
• জাতীয় শিক্ষা পরিষদ : 1905 খ্রিস্টাব্দের 8 নভেম্বর রংপুরে সর্বপ্রথম জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। স্বদেশী আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে 1906 খ্রিস্টাব্দের 11ই মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় 92 জন সদস্য নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ' গঠিত হয়। 14ই আগস্ট এই পরিষদের অধীনে অরবিন্দ ঘোষ কে অধ্যক্ষ করে ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ' প্রতিষ্ঠিত হয়।
• স্বদেশী আন্দোলনে সংবাদপত্রের ভূমিকা : ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা গুলির মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বেঙ্গলি’, মতিলাল ঘোষ সম্পাদিত ‘অমৃতবাজার পত্রিকা', নগেন্দ্রনাথ ঘোষ সম্পাদিত সাপ্তাহিক 'ইন্ডিয়ান নেশন', নরেন্দ্রনাথ সেন সম্পাদিত ‘ইন্ডিয়ান মিরর' এবং অরবিন্দ ঘোষ সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘বন্দেমাতরাম’, ইংরেজি মাসিক পত্রিকা গুলির মধ্যে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর ‘ডন’ ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এর ‘মর্ডান রিভিউ', বাংলা দৈনিক পত্রিকা গুলির মধ্যে ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সন্ধ্যা', বাংলা সাহিত্যিক পত্রিকা গুলির মধ্যে কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ এর ‘হিতবাদী’, জলধর সেন ও দীনেন্দ্রকুমার রায় এর ‘বসুমতি’, যোগেন্দ্র চন্দ্র বসুর ‘বঙ্গবাসী’, কৃষ্ণ কুমার মিত্রের ‘সঞ্জীবনী’, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের ‘স্বরাজ’, মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতার ‘নবশক্তি’ এবং অরবিন্দ পরিচালিত ‘, বাংলা মাসিক পত্রিকা গুলির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ ও ‘ভান্ডার’, সরলা দেবী চৌধুরানী সম্পাদিত ‘ভারতী’, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রবাসী’, সুরেশচন্দ্র সমাজপতির ‘সাহিত্য’, দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরীর ‘নব্য ভারত' ও কুমুদিনী মিত্রের ‘সুপ্রভাত’, বালগঙ্গাধর তিলকের ‘মারাঠা’ ও ‘কেশরী’, বালকৃষ্ণ নারায়ন ফাটক সম্পাদিত মারাঠি সাপ্তাহিক ‘বিহারী’ প্রভৃতি স্বদেশী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• বঙ্গভঙ্গ রদ : সরকার 1911 খ্রিস্টাব্দের 12 ডিসেম্বর কলকাতা থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত রদ করে।
• কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন : জাতীয় কংগ্রেসের সূচনা থেকেই মতাদর্শ ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে নরমপন্থী ও চরমপন্থী নামে দুটি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। 1905 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের বারাণসী অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে গোপালকৃষ্ণ গোখলে বয়কট আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। 1906 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতি দাদাভাই নওরোজি ঘোষণা করেন জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো স্বরাজ লাভ। 1907 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের গন্ডগোলে সভা ভেঙে যায়। চরমপন্থীরা কংগ্রেস থেকে বহিস্কৃত হয়। এই ঘটনা ‘সুরাট বিচ্ছেদ' নামে পরিচিত।
স্বদেশী যুগের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি :
• সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় : সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ও সর্বভারতীয় আন্দোলনে পরিণত হয় এবং তিনি জাতির 'মুকুটহীন রাজা'য় পরিণত হন। লর্ড কার্জন বলেছিলেন “বঙ্গভঙ্গ একটি স্থায়ী ঘটনা” (“the partition of Bengal is a settled fact”)। সুরেন্দ্রনাথ কার্জন কে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন “আমি এই স্থায়ী ঘটনা অস্থায়ী করে দেব” (I will unsettle the settled fact”)। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে 'দেশ নায়ক' হিসেবে অভিহিত করেন। 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 ই অক্টোবর তারই প্রস্তাবে উভয় বঙ্গের মিলনের প্রতীক 'মিলন মন্দির' এর ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আন্দোলনের ব্যয় নির্বাহের জন্য 'জাতীয় ধনভান্ডার' খোলা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে আপোষহীন মনোভাবের জন্য সরকারি মহলে তিনি ‘surrender not Banerjea' নামে পরিচিত ছিলেন।
• রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : 1904 খ্রিস্টাব্দে ‘স্বদেশী সমাজ' নামক এক প্রবন্ধ মারফত রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ শাসন কে সম্পূর্ণ বয়কটের আহ্বান জানান। বঙ্গভঙ্গের দিন কবি নগ্নপদে এক বিরাট মিছিল নিয়ে গঙ্গা স্নান সেরে দুই বঙ্গের মিলনের প্রতীক ‘রাখি বন্ধন’ অনুষ্ঠান পালন করেন। মিলন মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে আনন্দমোহন বসুর ইংরেজি ভাষণ এর বঙ্গানুবাদ তিনি পাঠ করেন। স্বদেশী আন্দোলন কালে ‘জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন' এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের নামে হল্লাবাজি, দুর্বলের উপর অত্যাচার এবং বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য 1908 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকাশ্যে রাজনীতি থেকে সরে যান।
• বিপিনচন্দ্র পাল : বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বিপিনচন্দ্র পাল চরমপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনে সামিল হন। স্বদেশী আন্দোলন উপলক্ষে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেন এবং ‘নিউ ইন্ডিয়া' ও ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকা মারফত দেশবাসীকে আত্মশক্তির বলে স্বাধীনতা অর্জনের আহ্বান জানান। জাতিকে তিনি প্রথম ‘অসহযোগ’ বা ‘নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ' এর মন্ত্রে দীক্ষিত করেন। 1906 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে বিপিনচন্দ্র বিদেশি হস্তক্ষেপ বর্জিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান। 1908 খ্রিস্টাব্দে ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকার মামলা শুরু হলে সরকার সাক্ষী হিসেবে তাকে আদালতে হাজির হতে বলেন। তিনি বিদেশীর আদালতে সাক্ষী দিতে অস্বীকার করলে আদালত অবমাননার দায়ে তার কারাদণ্ড হয়। ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন কে তিনি ‘আধ্যাত্বিক আন্দোলন' বলে মনে করতেন।
• বালগঙ্গাধর তিলক : বালগঙ্গাধর তিলক কেশরী ও মারাঠা পত্রিকা মারফত মহারাষ্ট্রে স্বদেশীর আদর্শকে জনপ্রিয় করে তোলেন। তার আহবানে সাড়া দিয়ে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে। তিনি বলতেন – “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অর্জন করবই” (“Swaraj is my birthright and I must have it”)। 1908 খ্রিস্টাব্দে মজঃফরপুরে ক্ষুদিরামের বোমা বিস্ফোরণের পর তিনি ‘মারাঠা’ ও ‘কেশরী’ পত্রিকায় যেসব প্রবন্ধ লেখেন, সেগুলির বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় এবং তিনি 6 বছরের জন্য সুদূর মান্দালয়ে নির্বাচিত হন।
• লালা লাজপত রায় : ‘পাঞ্জাব কেশরী' লালা লাজপত রায় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করার প্রস্তাব নিয়ে ইংল্যান্ডে যান এবং হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। তার উদ্যোগে পাঞ্জাবে স্বদেশী ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। 1907 খ্রিস্টাব্দে সরকারের শোষণমূলক ভূমি রাজস্ব আইন ও চেনাব (চন্দ্রভাগা) খাল অঞ্চলে অতিরিক্ত সেচ কর এর বিরুদ্ধে তিনি প্রবল কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলন হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠলে 1907 খ্রিস্টাব্দে আন্দোলনের নায়ক হিসেবে তাকে বার্মার মান্দালয় দুর্গে নির্বাসিত করা হয়।
• অরবিন্দ ঘোষ : স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে অরবিন্দ ঘোষ বরোদা কলেজের 750 টাকা বেতনের উপাধ্যক্ষের চাকরি ত্যাগ করে 1906 খ্রিস্টাব্দে বিনা বেতনে কলকাতার ‘জাতীয় কলেজে' অধ্যক্ষের গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 1906 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পত্রিকা মারফত তিনি দেশবাসীকে স্বদেশী ও স্বরাজ এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন। স্বরাজ অর্জনের উপায় হিসেবে ‘নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ' (স্বদেশী ও বয়কট) ও বিপ্লববাদের কথা বলেন। তার নেতৃত্বে মানিকতলা বাগানবাড়িতে ‘যুগান্তর’ দলের প্রধান কর্মকেন্দ্র স্থাপিত হয় এবং বাংলার বুকে বিপ্লববাদী কার্যকলাপ চলতে থাকে। 1908 খ্রিস্টাব্দে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আলিপুর বোমা মামলায় তিনি ধৃত হন। 1910 খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভের পর পন্ডিচেরিতে যোগ সাধনায় মগ্ন হন।
• অশ্বিনীকুমার দত্ত : বরিশালের ‘মুকুটহীন রাজা' অশ্বিনীকুমার দত্তের নেতৃত্বে স্বদেশী আন্দোলন বরিশালে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার প্রতিষ্ঠিত ‘স্বদেশ বান্ধব সমিতি' এবং তার 159 টি শাখা বরিশালে এই আন্দোলন কে সাফল্যমন্ডিত করে তোলে। 1908 খ্রিস্টাব্দে 11 ডিসেম্বর সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে 1910 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লক্ষ্ণৌতে অন্তরীণ করে রাখে।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.