•সৌর জগৎ : আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে প্রান্তভাগে রয়েছে আমাদের সৌরজগৎ। প্রায় 460 কোটি বছর আগে মহাশূন্যে ভাসমান ধূলিকণা হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের বিশাল মেঘ সংকোচিত হয়ে জমাট বেঁধে তৈরি হয় সূর্য। সদ্য জন্মানো নক্ষত্রে মহাকর্ষের কারণে পরমাণু পরমানু তে ধাক্কা লেগে নিউক্লিয় সংযোজন বা নিউক্লিয় ফিউশন পদ্ধতিতে প্রচন্ড তাপ শক্তি তৈরি হয়। অবশিষ্ট ধূলিকণা গ্যাস সূর্যের আকর্ষণে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই ধুলোর মেঘ থেকে তৈরি হয় পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ। এইসব নিয়েই সৃষ্টি হয় সৌরজগৎ বা solar system, যার কেন্দ্রে অবস্থান করছে সূর্য।
•সূর্য : সূর্যের বাইরের দিকের উষ্ণতা প্রায় 6000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, আর ভিতরের দিকের উষ্ণতা প্রায় 1.5 কোটি ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পৃথিবীর চেয়ে সূর্য 13 লক্ষ গুণ বড় এবং 3 লক্ষ গুণ ভারী। সূর্য রশ্মির 200 কোটি ভাগের এক ভাগ মাত্র পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। সূর্যের মতো মাঝারি হলুদ নক্ষত্রের আয়ু সাধারণত 1000 কোটি বছর। সূর্যের গায়ে যেখানে উত্তাপ একটু কম সেই জায়গা গুলো একটু কম উজ্জ্বল। তাই কালো দাগের মত দেখায়। এগুলো হলো ‘সৌর কলঙ্ক' (‘sunspots')। সূর্যের বাইরের অংশে (করোনা) ছোট ছোট বিস্ফোরণ হলে প্রচুর পরিমাণে আয়নিত কনা, গ্যাস, রশ্মি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একে ‘সৌর ঝড়' বা ‘solar storm' বলে। প্রতি 11 বছর অন্তর এই ঝর জোরালো হয়। তখন পৃথিবীর কৃত্রিম উপগ্রহ, যোগাযোগ ব্যবস্থায় গোলযোগ দেখা দেয়। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে 8 মিনিট 16.6 সেকেন্ড।
•সৌরজগতের গ্রহ সমূহ : সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আটটি। সৌরজগতের ভিতরের দিকের (অন্তঃস্থ) গ্রহ বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল। সৌরজগতের বাইরের দিকের (বহিঃস্থ) গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন। শুক্র বাদে প্রত্যেকটি গ্রহ ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তিত হয়। আকার অনুসারে বড় থেকে ছোট হিসাবে গ্রহগুলির ক্রম হল - বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, পৃথিবী, শুক্র, মঙ্গল এবং বুধ।
•বুধ (Mercury): বধু সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব 5.8 কোটি কিলোমিটার। ধূসর রঙের এই গ্রহের গায়ে প্রচুর গর্ত আছে। যে দিকটা সূর্যের দিকে থাকে তার উষ্ণতা 430 ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধ 58 দিন 17 ঘণ্টায় নিজের চারিদিকে একবার আবর্তন করে এবং সূর্যের চারিদিকে 88 দিনে একবার পরিক্রমণ করে। সৌরজগতে বুধই সবচেয়ে দ্রুত সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করে। বুধে কোন বায়ুমন্ডল এবং উপগ্রহ নেই।
• শুক্র (Venus) : সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব 10.7 কোটি কিলোমিটার। শুক্র পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ এবং এর আয়তন প্রায় পৃথিবীর সমান। শুক্রের আবর্তন কাল 243 দিন এবং পরিক্রমণ কাল 225 দিন। শুক্র সৌরজগতের সবচেয়ে ধীর আবর্তন গতি সম্পন্ন গ্রহ। এটি সৌরজগতের উষ্ণতম গ্রহ। এর উষ্ণতা 465 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকায় উষ্ণতা এত বেশি। শুক্রের কোন উপগ্রহ। সকালে পূব আকাশে এবং সন্ধ্যাবেলায় পশ্চিম আকাশে আমরা যে ‘শুকতারা’ দেখি তা আসলে শুক্র গ্রহ।
•পৃথিবী (Earth) : সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব 15 কোটি কিলোমিটার। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 15 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট। পৃথিবীর আবর্তন কাল 23 ঘন্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ড এবং পরিক্রমণ কাল 365 দিন 5 ঘন্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড। মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে নীল রঙের দেখায় বলে পৃথিবীকে ‘নীল গ্রহ' বলা হয়। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ।
•মঙ্গল (Mars) : সূর্য থেকে মঙ্গল 22.8 কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মঙ্গলের মাটিতে প্রচুর ফেরাস অক্সাইড (লোহা) থাকায় দেখতে লাল। তাই একে ‘লাল গ্রহ' বলা হয়। এর তাপমাত্রা অনেকটা পৃথিবীর মতো। মঙ্গলের আবর্তন কাল 24 ঘন্টা 37 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 687 দিন। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ, ডাইমোস ও ফোবোস।
•বৃহস্পতি (Jupiter) : বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ এবং এর মধ্যাকর্ষণ শক্তিও সব থেকে বেশি। সূর্য থেকে এর দূরত্ব 77.8 কোটি কিলোমিটার। এর তাপমাত্রা -150 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এর আবর্তন কাল 9 ঘন্টা 50 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 12 বছর। সৌরজগতে বৃহস্পতির আবর্তন কাল সবচেয়ে কম। বৃহস্পতির মোট 67 টি উপগ্রহ আছে (গ্যানিমিড ও ইউরোপা বিশেষ উল্লেখযোগ্য)। বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড।
•শনি (Saturn) : সূর্য থেকে শনির দূরত্ব 142.7 কোটি কিলোমিটার। এর তাপমাত্রা -184 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। শনির আবর্তন কাল 10.3 ঘন্টা এবং পরিক্রমণ কাল 29 বছর 6 মাস। শনির ঘনত্ব জলের থেকেও কম এবং এটি সৌরজগতের সবচেয়ে কম ঘনত্ব যুক্ত গ্রহ। শনিকে ঘিরে ধূলিকণা, বরফ, পাথরের টুকরো ইত্যাদি দিয়ে তৈরি উজ্জ্বল সাতটি বলয় আছে। শনির মোট 53 টি উপগ্রহ আছে। টাইটান হল এর বৃহত্তম উপগ্রহ।
•ইউরেনাস : সূর্য থেকে ইউরেনাসের দূরত্ব 287 কোটি কিলোমিটার। মিথেন গ্যাস বেশি থাকায় এর রং সবুজ। ইউরেনাস এর তাপমাত্রা –216 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট। এটি সৌরজগতের শীতলতম গ্রহ। এর আবর্তন কাল 17 ঘণ্টা 14 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 84 বছর। ইউরেনাসের মোট 27 টি উপগ্রহ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিরান্ডা। 1781 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম হার্শেল এটিকে গ্রহ রূপে চিহ্নিত করেন।
•নেপচুন : সূর্য থেকে নেপচুন এর দুরত্ব 449.7 কোটি কিলোমিটার। এই গ্রহে মিথেন ও হিলিয়াম গ্যাস বেশি থাকায় এর রং নীল। এর তাপমাত্রা -214 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এর আবর্তনকাল 16 ঘন্টা 6 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 165 বছর। নেপচুনের উপগ্রহের সংখ্যা 13 টি এবং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্রাইটন। 1846 খ্রিস্টাব্দের বিজ্ঞানী জে. জি. গ্যালে এটি আবিষ্কার করেন।
•বামন গ্রহ প্লুটো : 1930 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্লাইড ডব্লিউ টমবাউ প্লুটো আবিষ্কার করেন। তখন এটিকে সূর্যের নবম গ্রহ হিসেবে ধরা হয়। 2006 সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) প্লুটোকে বামন গ্রহ বা Dwarf planet আখ্যা দিয়েছে। নিজের কক্ষপথে কোন মহাজাগতিক বস্তু এলে বামন গ্রহেরা তা সরিয়ে দিতে পারে না। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে প্লুটোর সময় লাগে 248 বছর। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় 600 কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাসার্ধ প্রায় 3000 কিলোমিটার। এর 5 টি উপগ্রহ রয়েছে। প্লুটোতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস রয়েছে। প্লুটোকে 134340 নম্বরে চিহ্নিত করা হয়েছে।
•চাঁদ : পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ। পৃথিবী থেকে এর গড় দূরত্ব 3 লক্ষ 84 হাজার কিলোমিটার। পৃথিবীর আয়তন এর চার ভাগের এক ভাগের সমান চাঁদ। চাঁদের মধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের 1/6 ভাগ। চাঁদ 27 দিন 7 ঘন্টা 43 মিনিট 11.47 সেকেন্ডে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এর আবর্তন বেগ পরিক্রমণ বেগের প্রায় সমান বলে আমরা চাঁদের একটা দিক (59%) দেখতে পাই। চাঁদের কোন বায়ুমন্ডল এবং নিজস্ব কোন আলো নেই। সূর্যের আলো চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে 1.3 সেকেন্ড। আমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা আবার পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যায় চাঁদের আলোকিত অংশের বাড়া কমা কে বলে চন্দ্রকলা। একটা পূর্ণিমা থেকে আরেকটা পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কে বলে চান্দ্রমাস।
•সৌরজগতের আরো কিছু জ্যোতিষ্ক :
•গ্রহাণুপুঞ্জ : গ্রহের মতোই খুব ছোট ছোট জ্যোতিষ্ক বা গ্রহাণু নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। এদের একসঙ্গে গ্রহাণুপুঞ্জ (Asteroids) বলে। মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝে প্রায় 40 হাজার গ্রহাণুপুঞ্জ দেখা যায়। ‘সেরেস' হল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহাণু।
•ধুমকেতু : ঝাঁটার মতো লেজ বিশিষ্ট উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কে বলে ধুমকেতু (Comets)। সূর্যের কাছাকাছি এলে ধূমকেতুর ধুলো, গ্যাস জ্বলতে শুরু করে এবং লেজের মতো আকৃতি তৈরি হয়। পৃথিবী থেকে হ্যালির ধূমকেতু 76 বছর বাদে বাদে দেখা যায়। 1986 সালে একে শেষ দেখা গেছে।
•উল্কা : ধুমকেতু, গ্রহাণুপুঞ্জের ভাঙা টুকরো মহাকাশে ছড়িয়ে থাকে। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ এর মধ্যে এসে পড়লে প্রচন্ড বেগে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে থাকে এবং বাতাসের সঙ্গে ঘষা লেগে জ্বলতে শুরু করে। এইগুলো কে উল্কা (Meteor) বা তারা খসা বলে।
•সূর্য : সূর্যের বাইরের দিকের উষ্ণতা প্রায় 6000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, আর ভিতরের দিকের উষ্ণতা প্রায় 1.5 কোটি ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পৃথিবীর চেয়ে সূর্য 13 লক্ষ গুণ বড় এবং 3 লক্ষ গুণ ভারী। সূর্য রশ্মির 200 কোটি ভাগের এক ভাগ মাত্র পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। সূর্যের মতো মাঝারি হলুদ নক্ষত্রের আয়ু সাধারণত 1000 কোটি বছর। সূর্যের গায়ে যেখানে উত্তাপ একটু কম সেই জায়গা গুলো একটু কম উজ্জ্বল। তাই কালো দাগের মত দেখায়। এগুলো হলো ‘সৌর কলঙ্ক' (‘sunspots')। সূর্যের বাইরের অংশে (করোনা) ছোট ছোট বিস্ফোরণ হলে প্রচুর পরিমাণে আয়নিত কনা, গ্যাস, রশ্মি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একে ‘সৌর ঝড়' বা ‘solar storm' বলে। প্রতি 11 বছর অন্তর এই ঝর জোরালো হয়। তখন পৃথিবীর কৃত্রিম উপগ্রহ, যোগাযোগ ব্যবস্থায় গোলযোগ দেখা দেয়। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে 8 মিনিট 16.6 সেকেন্ড।
•সৌরজগতের গ্রহ সমূহ : সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আটটি। সৌরজগতের ভিতরের দিকের (অন্তঃস্থ) গ্রহ বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল। সৌরজগতের বাইরের দিকের (বহিঃস্থ) গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন। শুক্র বাদে প্রত্যেকটি গ্রহ ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তিত হয়। আকার অনুসারে বড় থেকে ছোট হিসাবে গ্রহগুলির ক্রম হল - বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, পৃথিবী, শুক্র, মঙ্গল এবং বুধ।
•বুধ (Mercury): বধু সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব 5.8 কোটি কিলোমিটার। ধূসর রঙের এই গ্রহের গায়ে প্রচুর গর্ত আছে। যে দিকটা সূর্যের দিকে থাকে তার উষ্ণতা 430 ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধ 58 দিন 17 ঘণ্টায় নিজের চারিদিকে একবার আবর্তন করে এবং সূর্যের চারিদিকে 88 দিনে একবার পরিক্রমণ করে। সৌরজগতে বুধই সবচেয়ে দ্রুত সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করে। বুধে কোন বায়ুমন্ডল এবং উপগ্রহ নেই।
• শুক্র (Venus) : সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব 10.7 কোটি কিলোমিটার। শুক্র পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ এবং এর আয়তন প্রায় পৃথিবীর সমান। শুক্রের আবর্তন কাল 243 দিন এবং পরিক্রমণ কাল 225 দিন। শুক্র সৌরজগতের সবচেয়ে ধীর আবর্তন গতি সম্পন্ন গ্রহ। এটি সৌরজগতের উষ্ণতম গ্রহ। এর উষ্ণতা 465 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকায় উষ্ণতা এত বেশি। শুক্রের কোন উপগ্রহ। সকালে পূব আকাশে এবং সন্ধ্যাবেলায় পশ্চিম আকাশে আমরা যে ‘শুকতারা’ দেখি তা আসলে শুক্র গ্রহ।
•পৃথিবী (Earth) : সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব 15 কোটি কিলোমিটার। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 15 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট। পৃথিবীর আবর্তন কাল 23 ঘন্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ড এবং পরিক্রমণ কাল 365 দিন 5 ঘন্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড। মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে নীল রঙের দেখায় বলে পৃথিবীকে ‘নীল গ্রহ' বলা হয়। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ।
•মঙ্গল (Mars) : সূর্য থেকে মঙ্গল 22.8 কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মঙ্গলের মাটিতে প্রচুর ফেরাস অক্সাইড (লোহা) থাকায় দেখতে লাল। তাই একে ‘লাল গ্রহ' বলা হয়। এর তাপমাত্রা অনেকটা পৃথিবীর মতো। মঙ্গলের আবর্তন কাল 24 ঘন্টা 37 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 687 দিন। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ, ডাইমোস ও ফোবোস।
•বৃহস্পতি (Jupiter) : বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ এবং এর মধ্যাকর্ষণ শক্তিও সব থেকে বেশি। সূর্য থেকে এর দূরত্ব 77.8 কোটি কিলোমিটার। এর তাপমাত্রা -150 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এর আবর্তন কাল 9 ঘন্টা 50 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 12 বছর। সৌরজগতে বৃহস্পতির আবর্তন কাল সবচেয়ে কম। বৃহস্পতির মোট 67 টি উপগ্রহ আছে (গ্যানিমিড ও ইউরোপা বিশেষ উল্লেখযোগ্য)। বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড।
•শনি (Saturn) : সূর্য থেকে শনির দূরত্ব 142.7 কোটি কিলোমিটার। এর তাপমাত্রা -184 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। শনির আবর্তন কাল 10.3 ঘন্টা এবং পরিক্রমণ কাল 29 বছর 6 মাস। শনির ঘনত্ব জলের থেকেও কম এবং এটি সৌরজগতের সবচেয়ে কম ঘনত্ব যুক্ত গ্রহ। শনিকে ঘিরে ধূলিকণা, বরফ, পাথরের টুকরো ইত্যাদি দিয়ে তৈরি উজ্জ্বল সাতটি বলয় আছে। শনির মোট 53 টি উপগ্রহ আছে। টাইটান হল এর বৃহত্তম উপগ্রহ।
•ইউরেনাস : সূর্য থেকে ইউরেনাসের দূরত্ব 287 কোটি কিলোমিটার। মিথেন গ্যাস বেশি থাকায় এর রং সবুজ। ইউরেনাস এর তাপমাত্রা –216 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট। এটি সৌরজগতের শীতলতম গ্রহ। এর আবর্তন কাল 17 ঘণ্টা 14 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 84 বছর। ইউরেনাসের মোট 27 টি উপগ্রহ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিরান্ডা। 1781 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম হার্শেল এটিকে গ্রহ রূপে চিহ্নিত করেন।
•নেপচুন : সূর্য থেকে নেপচুন এর দুরত্ব 449.7 কোটি কিলোমিটার। এই গ্রহে মিথেন ও হিলিয়াম গ্যাস বেশি থাকায় এর রং নীল। এর তাপমাত্রা -214 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এর আবর্তনকাল 16 ঘন্টা 6 মিনিট এবং পরিক্রমণ কাল 165 বছর। নেপচুনের উপগ্রহের সংখ্যা 13 টি এবং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্রাইটন। 1846 খ্রিস্টাব্দের বিজ্ঞানী জে. জি. গ্যালে এটি আবিষ্কার করেন।
•বামন গ্রহ প্লুটো : 1930 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্লাইড ডব্লিউ টমবাউ প্লুটো আবিষ্কার করেন। তখন এটিকে সূর্যের নবম গ্রহ হিসেবে ধরা হয়। 2006 সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) প্লুটোকে বামন গ্রহ বা Dwarf planet আখ্যা দিয়েছে। নিজের কক্ষপথে কোন মহাজাগতিক বস্তু এলে বামন গ্রহেরা তা সরিয়ে দিতে পারে না। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে প্লুটোর সময় লাগে 248 বছর। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় 600 কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাসার্ধ প্রায় 3000 কিলোমিটার। এর 5 টি উপগ্রহ রয়েছে। প্লুটোতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস রয়েছে। প্লুটোকে 134340 নম্বরে চিহ্নিত করা হয়েছে।
•চাঁদ : পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ। পৃথিবী থেকে এর গড় দূরত্ব 3 লক্ষ 84 হাজার কিলোমিটার। পৃথিবীর আয়তন এর চার ভাগের এক ভাগের সমান চাঁদ। চাঁদের মধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের 1/6 ভাগ। চাঁদ 27 দিন 7 ঘন্টা 43 মিনিট 11.47 সেকেন্ডে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এর আবর্তন বেগ পরিক্রমণ বেগের প্রায় সমান বলে আমরা চাঁদের একটা দিক (59%) দেখতে পাই। চাঁদের কোন বায়ুমন্ডল এবং নিজস্ব কোন আলো নেই। সূর্যের আলো চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে 1.3 সেকেন্ড। আমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা আবার পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যায় চাঁদের আলোকিত অংশের বাড়া কমা কে বলে চন্দ্রকলা। একটা পূর্ণিমা থেকে আরেকটা পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কে বলে চান্দ্রমাস।
•সৌরজগতের আরো কিছু জ্যোতিষ্ক :
•গ্রহাণুপুঞ্জ : গ্রহের মতোই খুব ছোট ছোট জ্যোতিষ্ক বা গ্রহাণু নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। এদের একসঙ্গে গ্রহাণুপুঞ্জ (Asteroids) বলে। মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝে প্রায় 40 হাজার গ্রহাণুপুঞ্জ দেখা যায়। ‘সেরেস' হল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহাণু।
•ধুমকেতু : ঝাঁটার মতো লেজ বিশিষ্ট উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কে বলে ধুমকেতু (Comets)। সূর্যের কাছাকাছি এলে ধূমকেতুর ধুলো, গ্যাস জ্বলতে শুরু করে এবং লেজের মতো আকৃতি তৈরি হয়। পৃথিবী থেকে হ্যালির ধূমকেতু 76 বছর বাদে বাদে দেখা যায়। 1986 সালে একে শেষ দেখা গেছে।
•উল্কা : ধুমকেতু, গ্রহাণুপুঞ্জের ভাঙা টুকরো মহাকাশে ছড়িয়ে থাকে। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ এর মধ্যে এসে পড়লে প্রচন্ড বেগে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে থাকে এবং বাতাসের সঙ্গে ঘষা লেগে জ্বলতে শুরু করে। এইগুলো কে উল্কা (Meteor) বা তারা খসা বলে।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.