মুঘল পরবর্তী সময়ে কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির বিকাশ - বাংলা || Regional Uprising in the later Mughal period - Bengal


মুর্শিদকুলি খাঁ : ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বাংলায় স্বাধীন নবাবির প্রতিষ্ঠা করেন তার বিশ্বস্ত দেওয়ান ও সুদক্ষ রাজকর্মচারী মুর্শিদকুলি খাঁ। তিনি দক্ষিণ ভারতের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে হাজি শাফি ইস্পাহানি নামে জনৈক মুসলিম তাকে কিনে নেন এবং তার নাম হয় মহম্মদ হাদি। 1696 খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাকে হায়দ্রাবাদের দেওয়ান বা রাজস্ব বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। 1700 খ্রিস্টাব্দে ঔরংজেব কর্তৃক তিনি বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত হন এবং ঔরঙ্গজেব তাকে ‘মুর্শিদকুলি খাঁ' উপাধি দেন। সে সময় বাংলার সুবাদার বা শাসনকর্তা ছিলেন বাদশাহের পৌত্র আজিম-উস-শান। সুবাদারের সঙ্গে অচিরেই তার বিরোধ বাধে। মুর্শিদকুলি খাঁ রাজধানী ঢাকা থেকে মুকসুদাবাদে তার দপ্তর স্থানান্তরিত করেন। পরে তার নাম অনুসারে মুকসুদাবাদের নাম হয় মুর্শিদাবাদ। 1717 খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হলে মুর্শিদাবাদ বাংলা রাজধানী হয়। রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি সমস্ত জায়গীর গুলিকে ‘খালিসা’ জমি বা সরকারি জমিতে পরিণত করেন। জমি জরিপ করে উৎপাদনের ভিত্তিতে জমির রাজস্ব নির্ধারণ করেন এবং নিলামে সর্বোচ্চ ডাকদাতার ওপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব বা জমি ইজারা দেন। এই ব্যবস্থাকে ‘ইজারাদারি ব্যবস্থা' বলা হয়।

সুজাউদ্দিন : মুর্শিদকুলি খাঁর মৃত্যুর পর 1727 খ্রিস্টাব্দে তার জামাতা ও উড়িষ্যার সহকারি সুবাদার সুজাউদ্দিন বাংলার মসনদে বসেন। তার সময় বিহার বাংলা সঙ্গে যুক্ত হয়। সুদক্ষ, প্রজাহিতৈষী ও ন্যায় পরায়ণ সুজাউদ্দিনের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির যুগ' হিসেবে চিহ্নিত।

সরফরাজ খাঁ : সুজাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র সরফরাজ খাঁ 1739 খ্রিস্টাব্দে বাংলার মসনদে বসেন। 1740 খ্রিস্টাব্দে বিহারের সহকারি শাসনকর্তা আলীবর্দী খাঁ গিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজ খাঁ কে পরাজিত ও নিহত করে বাংলার সিংহাসনে বসেন।

আলিবর্দি খাঁ : আলীবর্দী খাঁ একজন সুদক্ষ ও প্রজাহিতৈষী নবাব ছিলেন। কৃষি ও কৃষকদের উন্নতিসাধনে তিনি যত্নবান ছিলেন। তার রাজত্বকাল এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো বিহারের বিদ্রোহী আফগানদের দমন এবং বাংলার ওপর মারাঠাদের বর্গী আক্রমন। প্রায় 11 বছর ধরে বারংবার বর্গীর আক্রমণে বাংলার বুকে চরম নৈরাজ্য দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত 1751 খ্রিস্টাব্দে দুই পক্ষে এক সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় সন্ধির শর্ত অনুসারে ওড়িশার ওপর নাগপুরের স্বাধীন মারাঠা নায়ক রঘুজি ভোঁসলের প্রভুত্ব স্বীকৃত হয়। আলীবর্দী খাঁ তাকে বার্ষিক 12 লক্ষ টাকা চৌথ হিসেবে দিতে স্বীকৃত হন। অপরপক্ষে রঘুজি ভোঁসলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আক্রমন না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Advertisement