• বাকাটক সাম্রাজ্য : উত্তর ভারতে গুপ্ত শাসনের সময় থেকে দাক্ষিণাত্যে বাকাটক শাসন শুরু হয়েছিল । আনুমানিক 225 খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যে বাকাটক শক্তি বড় হয়ে দেখা দেয় । দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মেয়ে প্রভাবতী গুপ্তার বিয়ে হয়েছিল বাকাটক রাজা দ্বিতীয় রুদ্র সেনের সঙ্গে । দ্বিতীয় রুদ্র সেনের মৃত্যুর পর প্রভাবতী গুপ্তাই বাকাটক সাম্রাজ্যের শাসন ভার চালিয়েছিলেন ।
• পুষ্যভূতি বংশ : পুষ্যভূতিরা থানেশ্বরের শাসক ছিলেন । প্রভাকর বর্ধন এর সময় থেকে পুষ্যভূতি দের ক্ষমতা বাড়তে থাকে । 605 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রভাকর বর্ধন মারা গেলে রাজ্যবর্ধন শাসনের দায়িত্ব পান । কনৌজের রাজা গ্রহবর্মার সঙ্গে তার কন্যা রাজ্যশ্রী এর বিবাহ হয়েছিল । কনৌজ-মালব দ্বন্দ্বে গ্রহবর্মা মারা যান । রাজ্যবর্ধন তখন মালবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন । মালবের রাজা দেব গুপ্তের সহযোগী গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের হাতে রাজ্যবর্ধন মারা যান ।
• হর্ষবর্ধন : 606 খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধন থানেশ্বর ও কনৌজ দুইয়েরই শাসনভার নেন । এই সময় থেকে হর্ষাব্দ গোনা শুরু হয় । মগধ জয় করে হর্ষ 'মগধরাজ' উপাধি নিয়ে ছিলেন । চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তির আইহোল প্রশস্তিতে দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে হর্ষের পরাজয়ের ইতিহাস (620 খ্রিস্টাব্দে নর্মদা নদীর তীরে পরাজিত হন) রচিত আছে । গৌড়েশ্বর শশাঙ্কের সাথেও তিনি কখনও যুদ্ধে জয়লাভ করেন নি । হর্ষবর্ধন কে সকলোত্তরপথনাথ বলা হয় । যদিও সমস্ত উত্তর ভারতে তার আধিপত্য ছিল না । তিনি শিলাদিত্য উপাধি নিয়েছিলেন । হর্ষবর্ধনের সময় জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ কর নেওয়া হতো । বানভট্ট হর্ষবর্ধন কে নিয়ে ‘হর্ষচরিত' কাব্য লেখেন ; এটি ছিল সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রথম ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ । এটি আদতে একটি প্রশস্তি কাব্য । ‘কাদম্বরী’ বাণভট্ট অপর একটি কাব্য । হর্ষবর্ধন তিনটি সংস্কৃত নাটক রচনা করেছিলেন – ‘নাগানন্দ’, ‘রত্নাবলী’ ও ‘প্রিয়দর্শীকা' । (630 খ্রিস্টাব্দে) চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তার রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন । তার রচিত সি ইউ কি গ্রন্থে হর্ষবর্ধনের রাজত্ব সম্বন্ধে জানা যায় । হিউ এন সাং এর রচনা থেকে জানা যায় হর্ষবর্ধন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রয়াগে একটি মহাদানক্ষেত্রের আয়োজন করতেন এবং প্রতিবছর একটা বৌদ্ধ সম্মেলন আয়োজন করতেন । হর্ষবর্ধন বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারী ছিলেন । দ্বিতীয় কীর্তি বর্মন এই বংশের শেষ রাজা ছিলেন ।
• বাতাপির চালুক্য বংশ : চালুক্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রথম পুলকেশী । তাদের রাজধানী ছিল বাতাপি বা বর্তমান কর্ণাটকের বাদামি । অজন্তা ও ইলোরার অধিকাংশ গুহাচিত্র এবং স্থাপত্য গুলি চালুক্য দের সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল । চালুক্য দের দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল - উত্তরে রাষ্ট্রকূট এবং দক্ষিনে পল্লব ।
• দ্বিতীয় পুলকেশী : চালুক্য বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন দ্বিতীয় পুলকেশী । তিনি হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক ছিলেন । তিনি শৈব ছিলেন । তিনি ‘পরমেশ্বর পরমভাগবত' ও ‘পৃথিবীবল্লভ' নামেও পরিচিত ছিলেন । তিনি পার্শিয়ান রাজা দ্বিতীয় খসরুর রাজসভায় দূত পাঠিয়েছিলেন । তার সভাকবি রবি কীর্তি আইহোল প্রশস্তি রচনা তিনি পল্লব রাজ প্রথম মহেন্দ্র বর্মন কে পরাস্ত করেন । মহেন্দ্র বর্মনের পুত্র প্রথম নরসিংহ বর্মন পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য 642 খ্রিস্টাব্দে চালুক্য রাজধানী বাতাপি আক্রমণ করে ( মনিমন্ডলমের যুদ্ধ ) । বাতাপি ধ্বংস হয় ও দ্বিতীয় পুলকেশী নিহত হন । নরসিংহ বর্মন ‘বাতাপিকোন্ড' উপাধি ধারণ করেন ।
• রাষ্ট্রকূট বংশ : রাষ্ট্রকূট বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন দন্তীদুর্গ । দন্তী দুর্গ এর উত্তরাধিকারী প্রথম কৃষ্ণ চালুক্য রাজ কীর্তি বর্মন কে পরাজিত করে সমগ্র মহারাষ্ট্রে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন । রাষ্ট্রকূট রাজা প্রথম কৃষ্ণ ইলোরার কৈলাসনাথ মন্দির নির্মাণ করেন । প্রথম অমোঘ বর্ষ ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি ‘কবিরাজ মার্গ' নামে কন্নড় ভাষায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ এবং 'প্রশ্নোত্তর মল্লিকা’ নামে সংস্কৃত গ্রন্থ লেখেন। তিনি মান্যখেতে তার রাজধানী স্থাপন করেন। তাকে দক্ষিণ ভারতের অশোক বলা হয় । এই বংশের রাজা তৃতীয় কৃষ্ণ রামেশ্বরমে একটি বিজয়স্তম্ভ ও একটি মন্দির নির্মাণ করেন। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির এবং কর্ণাটকের জৈন নারায়ন মন্দির রাষ্ট্রকূট রাজাদের সময় নির্মিত হয়েছিল। 973 খ্রিস্টাব্দে কল্যাণের চালুক্য বংশের রাজা দ্বিতীয় তৈলপ বা তৈল শেষ রাষ্ট্রকূট রাজ চতুর্থ অমোঘবর্ষ বা কার্ক কে পরাজিত করলে রাষ্ট্রকূট বংশের বিলোপ ঘটে ।
• কল্যাণের চালুক্য বংশ : 973 খ্রিস্টাব্দে বাতাপির চালুক্যদের বংশধর দ্বিতীয় তৈলপ রাষ্ট্রকূট রাজ কার্ক কে পরাজিত করে দাক্ষিণাত্যের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এই বংশের প্রতিষ্ঠা করেন । হায়দ্রাবাদ রাজ্যের অন্তর্গত কল্যান বা কল্যাণী ছিল এ রাজ্যের রাজধানী । এই বংশের রাজা সোমেশ্বর এর কনিষ্ঠপুত্র ত্রিভুবনমল্ল বিক্রমাদিত্য বা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য এই বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতি ছিলেন । তার সভাকবি বিহ্লন এর বিক্রমাঙ্কদেব চরিত গ্রন্থ থেকে তার সামরিক প্রতিভা ও কৃতিত্বের কথা জানা যায় । বিহ্লন ছাড়াও মিতাক্ষরা গ্রন্থের রচয়িতা বিজ্ঞানেশ্বর তারা রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন ।
• গঙ্গ বংশ : এদেরকে উড়িষ্যার চেদি গঙ্গ বলা হয় । এই বংশের রাজা প্রথম নরসিংহ বর্মন কোনারকের সূর্য মন্দির নির্মাণ করেন। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা অনন্ত বর্মন গঙ্গ পুরীর জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন । খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, সম্ভবত তৃতীয় অনঙ্গ ভীমের রাজত্বকালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ।
• গঙ্গ দের পূর্বে উড়িষ্যায় সোম বংশীয় রাজারা রাজত্ব করত । এই বংশের রাজা ললাট ইন্দু কেশরী ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরটি নির্মাণ করেন ।
• পল্লব বংশ : এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সিংহ বিষ্নু । সিংহ বিষ্ণুর সভাসদ ভারবি কিরিতার্জুনিয়ম গ্রন্থটি রচনা করেন । পল্লবদের রাজধানী ছিল কাঞ্চি ( চেন্নাইয়ের দক্ষিণ অংশ ) । রাজা প্রথম মহেন্দ্র বর্মন এর আমলে চালুক্য-পল্লব প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় । তিনি মত্ত বিলাস প্রহসন নামে একটি সংস্কৃত ব্যঙ্গ নাটক রচনা করেন । প্রথম নরসিংহ বর্মন ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা । তিনি মহামল্ল উপাধি ধারণ করেন । চালুক্য রাজধানী বাতাপি অধিকার করে বাতাপিকোন্ড উপাধি নেন । তিনি মহাবলীপুরম বা মামালাপুরাম নগরের পত্তন করেছিলেন । তিনি মহাবলীপুরমের রথ ও মন্দিরগুলি নির্মাণ করেছিলেন । পল্লব রাজ দ্বিতীয় নরসিংহ বর্মন এর আমলে বিখ্যাত কৈলাসনাথ মন্দির তৈরি হয় এবং তিনি মহাবলীপুরমের মন্দিরগুলির নির্মাণকার্য সম্পন্ন করেন । পল্লব বংশের শেষ রাজা ছিলেন অপরাজিত বর্মন, তিনি 891 খ্রিস্টাব্দে চোল রাজা আদিত্য চোল কর্তৃক নিহত হন ।
• চোল বংশ : বিজয়ালয় এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । চোল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল তাঞ্জোর বা থাঞ্জাভুর । চোল রাজা প্রথম রাজারাজ উত্তর শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ জয় করেছিলেন । তিনি থাঞ্জাভুরে রাজরাজেশ্বর মন্দির ( বৃহদেশ্বর শিব মন্দির ও বলা হয় ) নির্মাণ করেছিলেন । তার পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র চোল ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা । তিনি কল্যানীর চালুক্যদের পরাজিত করেছিলেন এবং সমগ্র শ্রীলংকা জয় করেছিলেন । পাল রাজা মহীপাল কে গঙ্গা নদীর তীরে পরাজিত করে তিনি ‘গঙ্গাইকোন্ড’ উপাধি ধারণ করেছিলেন । চোল মন্দির গুলির প্রবেশপথে বিশাল বিশাল ত্বরণ নির্মিত হয়েছিল এই ত্বরণ গুলিকে গোপুরাম বলা হয় । চোল সময় যে স্বর্ণ মুদ্রা চালু হয়েছিল তার নাম ‘ক্যাশু'।
• আরো কিছু রাজবংশ :
• শৈলেন্দ্র বংশ : খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে সুমাত্রা, জাভা এবং মালয় উপদ্বীপে শৈলেন্দ্র বংশ রাজত্ব করত। তারা মূলত বৌদ্ধ ছিল। বরোবুদুরে বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ স্তুপটি তারা নির্মাণ করে।
• কম্বোডিয়ায় খমের বংশীয় রাজা দ্বিতীয় সূর্য বর্মন অঙ্কোর্ভাট মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি একটি বিষ্ণুমন্দির। এটি দ্রাবিড়ীয় শিল্প রীতিতে নির্মিত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মন্দির।
• পুষ্যভূতি বংশ : পুষ্যভূতিরা থানেশ্বরের শাসক ছিলেন । প্রভাকর বর্ধন এর সময় থেকে পুষ্যভূতি দের ক্ষমতা বাড়তে থাকে । 605 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রভাকর বর্ধন মারা গেলে রাজ্যবর্ধন শাসনের দায়িত্ব পান । কনৌজের রাজা গ্রহবর্মার সঙ্গে তার কন্যা রাজ্যশ্রী এর বিবাহ হয়েছিল । কনৌজ-মালব দ্বন্দ্বে গ্রহবর্মা মারা যান । রাজ্যবর্ধন তখন মালবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন । মালবের রাজা দেব গুপ্তের সহযোগী গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের হাতে রাজ্যবর্ধন মারা যান ।
• হর্ষবর্ধন : 606 খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধন থানেশ্বর ও কনৌজ দুইয়েরই শাসনভার নেন । এই সময় থেকে হর্ষাব্দ গোনা শুরু হয় । মগধ জয় করে হর্ষ 'মগধরাজ' উপাধি নিয়ে ছিলেন । চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তির আইহোল প্রশস্তিতে দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে হর্ষের পরাজয়ের ইতিহাস (620 খ্রিস্টাব্দে নর্মদা নদীর তীরে পরাজিত হন) রচিত আছে । গৌড়েশ্বর শশাঙ্কের সাথেও তিনি কখনও যুদ্ধে জয়লাভ করেন নি । হর্ষবর্ধন কে সকলোত্তরপথনাথ বলা হয় । যদিও সমস্ত উত্তর ভারতে তার আধিপত্য ছিল না । তিনি শিলাদিত্য উপাধি নিয়েছিলেন । হর্ষবর্ধনের সময় জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ কর নেওয়া হতো । বানভট্ট হর্ষবর্ধন কে নিয়ে ‘হর্ষচরিত' কাব্য লেখেন ; এটি ছিল সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রথম ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ । এটি আদতে একটি প্রশস্তি কাব্য । ‘কাদম্বরী’ বাণভট্ট অপর একটি কাব্য । হর্ষবর্ধন তিনটি সংস্কৃত নাটক রচনা করেছিলেন – ‘নাগানন্দ’, ‘রত্নাবলী’ ও ‘প্রিয়দর্শীকা' । (630 খ্রিস্টাব্দে) চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তার রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন । তার রচিত সি ইউ কি গ্রন্থে হর্ষবর্ধনের রাজত্ব সম্বন্ধে জানা যায় । হিউ এন সাং এর রচনা থেকে জানা যায় হর্ষবর্ধন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রয়াগে একটি মহাদানক্ষেত্রের আয়োজন করতেন এবং প্রতিবছর একটা বৌদ্ধ সম্মেলন আয়োজন করতেন । হর্ষবর্ধন বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারী ছিলেন । দ্বিতীয় কীর্তি বর্মন এই বংশের শেষ রাজা ছিলেন ।
• বাতাপির চালুক্য বংশ : চালুক্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রথম পুলকেশী । তাদের রাজধানী ছিল বাতাপি বা বর্তমান কর্ণাটকের বাদামি । অজন্তা ও ইলোরার অধিকাংশ গুহাচিত্র এবং স্থাপত্য গুলি চালুক্য দের সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল । চালুক্য দের দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল - উত্তরে রাষ্ট্রকূট এবং দক্ষিনে পল্লব ।
• দ্বিতীয় পুলকেশী : চালুক্য বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন দ্বিতীয় পুলকেশী । তিনি হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক ছিলেন । তিনি শৈব ছিলেন । তিনি ‘পরমেশ্বর পরমভাগবত' ও ‘পৃথিবীবল্লভ' নামেও পরিচিত ছিলেন । তিনি পার্শিয়ান রাজা দ্বিতীয় খসরুর রাজসভায় দূত পাঠিয়েছিলেন । তার সভাকবি রবি কীর্তি আইহোল প্রশস্তি রচনা তিনি পল্লব রাজ প্রথম মহেন্দ্র বর্মন কে পরাস্ত করেন । মহেন্দ্র বর্মনের পুত্র প্রথম নরসিংহ বর্মন পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য 642 খ্রিস্টাব্দে চালুক্য রাজধানী বাতাপি আক্রমণ করে ( মনিমন্ডলমের যুদ্ধ ) । বাতাপি ধ্বংস হয় ও দ্বিতীয় পুলকেশী নিহত হন । নরসিংহ বর্মন ‘বাতাপিকোন্ড' উপাধি ধারণ করেন ।
• রাষ্ট্রকূট বংশ : রাষ্ট্রকূট বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন দন্তীদুর্গ । দন্তী দুর্গ এর উত্তরাধিকারী প্রথম কৃষ্ণ চালুক্য রাজ কীর্তি বর্মন কে পরাজিত করে সমগ্র মহারাষ্ট্রে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন । রাষ্ট্রকূট রাজা প্রথম কৃষ্ণ ইলোরার কৈলাসনাথ মন্দির নির্মাণ করেন । প্রথম অমোঘ বর্ষ ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি ‘কবিরাজ মার্গ' নামে কন্নড় ভাষায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ এবং 'প্রশ্নোত্তর মল্লিকা’ নামে সংস্কৃত গ্রন্থ লেখেন। তিনি মান্যখেতে তার রাজধানী স্থাপন করেন। তাকে দক্ষিণ ভারতের অশোক বলা হয় । এই বংশের রাজা তৃতীয় কৃষ্ণ রামেশ্বরমে একটি বিজয়স্তম্ভ ও একটি মন্দির নির্মাণ করেন। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির এবং কর্ণাটকের জৈন নারায়ন মন্দির রাষ্ট্রকূট রাজাদের সময় নির্মিত হয়েছিল। 973 খ্রিস্টাব্দে কল্যাণের চালুক্য বংশের রাজা দ্বিতীয় তৈলপ বা তৈল শেষ রাষ্ট্রকূট রাজ চতুর্থ অমোঘবর্ষ বা কার্ক কে পরাজিত করলে রাষ্ট্রকূট বংশের বিলোপ ঘটে ।
• কল্যাণের চালুক্য বংশ : 973 খ্রিস্টাব্দে বাতাপির চালুক্যদের বংশধর দ্বিতীয় তৈলপ রাষ্ট্রকূট রাজ কার্ক কে পরাজিত করে দাক্ষিণাত্যের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এই বংশের প্রতিষ্ঠা করেন । হায়দ্রাবাদ রাজ্যের অন্তর্গত কল্যান বা কল্যাণী ছিল এ রাজ্যের রাজধানী । এই বংশের রাজা সোমেশ্বর এর কনিষ্ঠপুত্র ত্রিভুবনমল্ল বিক্রমাদিত্য বা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য এই বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতি ছিলেন । তার সভাকবি বিহ্লন এর বিক্রমাঙ্কদেব চরিত গ্রন্থ থেকে তার সামরিক প্রতিভা ও কৃতিত্বের কথা জানা যায় । বিহ্লন ছাড়াও মিতাক্ষরা গ্রন্থের রচয়িতা বিজ্ঞানেশ্বর তারা রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন ।
• গঙ্গ বংশ : এদেরকে উড়িষ্যার চেদি গঙ্গ বলা হয় । এই বংশের রাজা প্রথম নরসিংহ বর্মন কোনারকের সূর্য মন্দির নির্মাণ করেন। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা অনন্ত বর্মন গঙ্গ পুরীর জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন । খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, সম্ভবত তৃতীয় অনঙ্গ ভীমের রাজত্বকালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ।
• গঙ্গ দের পূর্বে উড়িষ্যায় সোম বংশীয় রাজারা রাজত্ব করত । এই বংশের রাজা ললাট ইন্দু কেশরী ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরটি নির্মাণ করেন ।
• পল্লব বংশ : এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সিংহ বিষ্নু । সিংহ বিষ্ণুর সভাসদ ভারবি কিরিতার্জুনিয়ম গ্রন্থটি রচনা করেন । পল্লবদের রাজধানী ছিল কাঞ্চি ( চেন্নাইয়ের দক্ষিণ অংশ ) । রাজা প্রথম মহেন্দ্র বর্মন এর আমলে চালুক্য-পল্লব প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় । তিনি মত্ত বিলাস প্রহসন নামে একটি সংস্কৃত ব্যঙ্গ নাটক রচনা করেন । প্রথম নরসিংহ বর্মন ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা । তিনি মহামল্ল উপাধি ধারণ করেন । চালুক্য রাজধানী বাতাপি অধিকার করে বাতাপিকোন্ড উপাধি নেন । তিনি মহাবলীপুরম বা মামালাপুরাম নগরের পত্তন করেছিলেন । তিনি মহাবলীপুরমের রথ ও মন্দিরগুলি নির্মাণ করেছিলেন । পল্লব রাজ দ্বিতীয় নরসিংহ বর্মন এর আমলে বিখ্যাত কৈলাসনাথ মন্দির তৈরি হয় এবং তিনি মহাবলীপুরমের মন্দিরগুলির নির্মাণকার্য সম্পন্ন করেন । পল্লব বংশের শেষ রাজা ছিলেন অপরাজিত বর্মন, তিনি 891 খ্রিস্টাব্দে চোল রাজা আদিত্য চোল কর্তৃক নিহত হন ।
• চোল বংশ : বিজয়ালয় এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । চোল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল তাঞ্জোর বা থাঞ্জাভুর । চোল রাজা প্রথম রাজারাজ উত্তর শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ জয় করেছিলেন । তিনি থাঞ্জাভুরে রাজরাজেশ্বর মন্দির ( বৃহদেশ্বর শিব মন্দির ও বলা হয় ) নির্মাণ করেছিলেন । তার পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র চোল ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা । তিনি কল্যানীর চালুক্যদের পরাজিত করেছিলেন এবং সমগ্র শ্রীলংকা জয় করেছিলেন । পাল রাজা মহীপাল কে গঙ্গা নদীর তীরে পরাজিত করে তিনি ‘গঙ্গাইকোন্ড’ উপাধি ধারণ করেছিলেন । চোল মন্দির গুলির প্রবেশপথে বিশাল বিশাল ত্বরণ নির্মিত হয়েছিল এই ত্বরণ গুলিকে গোপুরাম বলা হয় । চোল সময় যে স্বর্ণ মুদ্রা চালু হয়েছিল তার নাম ‘ক্যাশু'।
• আরো কিছু রাজবংশ :
• শৈলেন্দ্র বংশ : খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে সুমাত্রা, জাভা এবং মালয় উপদ্বীপে শৈলেন্দ্র বংশ রাজত্ব করত। তারা মূলত বৌদ্ধ ছিল। বরোবুদুরে বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ স্তুপটি তারা নির্মাণ করে।
• কম্বোডিয়ায় খমের বংশীয় রাজা দ্বিতীয় সূর্য বর্মন অঙ্কোর্ভাট মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি একটি বিষ্ণুমন্দির। এটি দ্রাবিড়ীয় শিল্প রীতিতে নির্মিত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মন্দির।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.