• শিলা : পৃথিবী যে শক্ত আবরণে ঢাকা তা হলো শিলা। শিলা হল প্রকৃতিতে প্রাপ্ত এক বা একাধিক খনিজের সমসত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ। যেমন গ্রানাইট শিলা কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার, মাইকা ও হর্নব্লেন্ড খনিজ দ্বারা গঠিত। আবার চুনাপাথর শুধুমাত্র ক্যালসাইট অথবা অ্যারাগোনাইট খণিজ দিয়ে গঠিত। উৎপত্তি এবং বৈশিষ্ট্য অনুসারে শিলাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় - আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা এবং রূপান্তরিত শিলা।
• আগ্নেয় শিলা : পৃথিবী সৃষ্টির সময় উত্তপ্ত ও তরল অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ভূত্বক এর মধ্যে ও উপরে প্রথম যে কঠিন শিলার সৃষ্টি হয় তা হলো আগ্নেয়শিলা। পৃথিবীতে প্রথম সৃষ্টি হওয়ার জন্য এই শিলার আরেক নাম প্রাথমিক শিলা। উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলা - নিঃসারী আগ্নেয় শিলা এবং উদবেধী আগ্নেয়শিলা।
• নিঃসারী আগ্নেয় শিলা : ভূ-অভ্যন্তরের অত্যধিক চাপে উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ভূত্বকের কোন দুর্বল ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রূপে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে আগ্নেয় শিলা সৃষ্টি করে তার নাম নিঃসারী আগ্নেয় শিলা। ব্যাসল্ট ও অবসিডিয়ান এই ধরনের আগ্নেয় শিলার উদাহরণ।
• উদবেধী আগ্নেয়শিলা : ভূ-অভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা ভূত্বকের দুর্বল ফাটল বা ছিদ্রের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে না পেরে ভূ-অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে উদবেধী আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি করে। গ্রানাইট, ডোলেরাইট এই ধরনের আগ্নেয় শিলার উদাহরণ। উদবেধী আগ্নেয়শিলা আবার দু'ধরনের হয় - উপপাতালিক শিলা এবং পাতালিক শিলা।
• উপপাতালিক শিলা : ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের কোন ফাটল বা ছিদ্র পথে ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে সৃষ্টি করে উপপাতালিক শিলা। ডোলেরাইট এই জাতীয় শিলার উদাহরণ।
• পাতালিক শিলা : ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের একেবারে তলদেশে অতি ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তা হল পাতালিক শিলা। গ্রানাইট এই শিলার উদাহরণ।
• গ্রানাইট : সাধারণত এই আগ্নেয় শিলায় মহাদেশীয় ভূত্বক গঠিত। হালকা সাদা, ধূসর থেকে গোলাপি রঙের এই শিলা কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার, মাইকা ও হর্নব্লেন্ড খনিজ দ্বারা গঠিত। এই শিলা খুব ভারী এবং শক্ত হওয়ায় গ্রানাইটের ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি। ভূ অভ্যন্তরে অতি ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বাঁধায় এই শিলার দানা গুলো কিছুটা বড় হয় (ব্যাস 3 মিলিমিটার এর বেশি)। গ্রানাইট শিলায় গঠিত অঞ্চলের ভূমিরূপ সাধারনতো গোলাকার হয়।
• ব্যাসল্ট : মহাসাগরীয় ভূত্বক সাধারণত এই শিলায় গঠিত হয়। খুব ভারী ও শক্ত ক্ষয় প্রতিরোধী এই শিলা গাঢ় ধূসর থেকে কালো রঙের হয়। ব্যাসল্ট শিলা গঠনকারী প্রধান খনিজ গুলি হল কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার অলিভিন ও পাইরক্সিন। ব্যাসল্ট শিলায় উল্লম্ব দারণ ও ফাটলের সংখ্যা খুব বেশি থাকায় এর প্রবেশ্যতা যথেষ্ট বেশি। খুব দ্রুত জমাট বেঁধে গঠিত হওয়ায় এর দানা গুলো বেশ সূক্ষ্ম (1 মিলিমিটার এর কম)। ব্যাসল্ট শিলা গঠিত অঞ্চলে চ্যাপ্টা আকৃতির ভূমিরূপ দেখা যায়।
• পাললিক শিলা : আগ্নেয় শিলা বহুদিন ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তি যেমন – নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্র তরঙ্গ প্রভৃতির প্রভাবে উৎস স্থান থেকে ধীরে ধীরে ক্ষয় প্রাপ্ত ও পরিবাহিত হয়ে কোন সমুদ্র বা নদীর তলদেশে জমাট বেঁধে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং উপরের চাপে ও নিচের তাপে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি করে। পলি জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয় বলে এর নাম পাললিক শিলা। চুনাপাথর, বেলেপাথর, কাদাপাথর প্রভৃতি পাললিক শিলার উদাহরণ। পলির উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলা দু প্রকার - সংঘাত শিলা এবং অসংঘাত শিলা।
• সংঘাত শিলা : প্রাচীন শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বহুদিন ধরে জমাট বেধে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে সংঘাত শিলা বলা হয়। কংগ্লোমারেট, ব্রেকসিয়া প্রভৃতি এই শিলার উদাহরণ।
• অসংঘাত শিলা : রাসায়নিক উপায়ে অথবা জৈবিক উপায়ে সৃষ্ট শিলা হল অসংঘাত শিলা। চুনাপাথর, লবণ শিলা প্রভৃতি হল এই ধরনের শিলার উদাহরণ।
• যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা তিন প্রকারের – কাদা পাথর, বেলে পাথর এবং কংগ্লোমারেট । কাদা পাথরের দানা গুলি 0.06 মিলিমিটারের কম ব্যাস যুক্ত হয়, বেলে পাথরের দানা গুলির ব্যাস 0.06 থেকে 2 মিলিমিটার পর্যন্ত হয় এবং কংগ্লোমারেটের দানা গুলির ব্যাস 2 মিলিমিটারের বেশি হয়।
• চুনাপাথর : চুনাপাথর বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট বিশুদ্ধ জলে দ্রবীভূত হয় না। কিন্তু বৃষ্টির জল বা অ্যাসিড মিশ্রিত জলে দ্রবীভূত হয় এবং ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয়। এর ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কম এবং প্রবেশ্যতা বেশি। চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টির জলে দ্রুত গর্ত সৃষ্টি হয় এবং জল নিচে নেমে যায়। চুনা পাথরের রং সাদা, ধূসর, সবুজ, কালচে হতে পারে। সিমেন্ট তৈরিতে, লৌহ ইস্পাত শিল্পে কাঁচামাল হিসাবে চুনাপাথর ব্যবহৃত হয়।
• বেলে পাথর : বেলে পাথরের প্রবেশ্যতা বেশি হলেও ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি। বেলেপাথর হলুদ, কমলা, লাল, গোলাপী, সাদা, ধূসর হতে পারে। বেলেপাথরে গঠিত অঞ্চলে মৃত্তিকা লবণাক্ত ও এর উর্বরতা কম। স্থাপত্য, স্মৃতিসৌধ এই পাথরে নির্মিত হয়। লালকেল্লা, উদয়গিরি-খণ্ডগিরির মন্দির, খাজুরাহোর মন্দির, জয়সালমীরের সোনার কেল্লা বেলে পাথরে তৈরি।
• কাদা পাথর : কালচে ধূসর রংয়ের কাদা পাথরের মধ্যে স্তরায়ন খুব স্পষ্ট। এটি একটি মিহিদানা যুক্ত শিলা। এর সছিদ্রতা খুব বেশি। এই শিলা বেশ নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির। একে পাতলা স্তরে ভাঙা যায় বলে বাড়ির টালী তৈরিতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। সহজেই ভেঙে যায় বলে এই শিলায় গঠিত অঞ্চলে বড় ধরনের নির্মাণকার্য করা উচিত নয়।
• জীবাশ্ম : স্তরে স্তরে জমাট বেঁধে পাললিক শিলা সৃষ্টির সময় কখনো কখনো সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ তার মধ্যে চাপা পড়ে যায়। পরে পাললিক শিলার মধ্যে ঐ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ প্রস্তরীভূত হলে দেহের ছাপ থেকে যায়। একে বলে জীবাশ্ম।
• কয়লা এবং খনিজ তেল : প্রায় 30 থেকে 35 কোটি বছর আগে ভু আন্দোলনের সময় পৃথিবীর অরণ্য ভূগর্ভে চাপা পড়ে ভূগর্ভের চাপ ও তাপে উদ্ভিদের কাণ্ডে সঞ্চিত কার্বন স্তরীভূত হয়ে কয়লায় পরিণত হয়।প্রায় 7 থেকে 10 কোটি বছর আগে পাললিক শিলা স্তরে নানা ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহ চাপা পড়ে, উপরের প্রবল চাপে ও ভূগর্ভের প্রচণ্ড তাপে হাইড্রোজেন ও কার্বন এর দ্রবণে পরিণত হয়ে খনিজ তেলের সৃষ্টি হয়। খনিজ তেলের উপরের স্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি দেখা যায়। শুধুমাত্র সছিদ্র পাললিক শিলা স্তরে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।
• রূপান্তরিত শিলা : ভূ-অভ্যন্তরের প্রচণ্ড চাপ, তাপ ও নানা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আগ্নেয় ও পাললিক শিলা দীর্ঘ সময় ধরে তার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট শিলায় পরিণত হয়। একে বলে রূপান্তরিত শিলা। অত্যধিক তাপে পিট কয়লা গ্রাফাইটে, প্রচণ্ড চাপে শেল স্লেটে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যান্ডালুসাইট সিলিমেনাইটে রূপান্তরিত হয়।
• রূপান্তরিত শিলার উদাহরণ :
• গ্রানাইট থেকে নিস
• ব্যাসল্ট থেকে অ্যাম্ফিবোলাইট
• বেলে পাথর থেকে কোয়ার্টজাইট
• চুনাপাথর থেকে মার্বেল
• পিট কয়লা থেকে গ্রাফাইট
• শেল থেকে স্লেট, স্লেট থেকে ফিলাইট এবং ফিলাইট থেকে শিস্ট উৎপন্ন হয়।
• আগ্নেয় শিলা : পৃথিবী সৃষ্টির সময় উত্তপ্ত ও তরল অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ভূত্বক এর মধ্যে ও উপরে প্রথম যে কঠিন শিলার সৃষ্টি হয় তা হলো আগ্নেয়শিলা। পৃথিবীতে প্রথম সৃষ্টি হওয়ার জন্য এই শিলার আরেক নাম প্রাথমিক শিলা। উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলা - নিঃসারী আগ্নেয় শিলা এবং উদবেধী আগ্নেয়শিলা।
• নিঃসারী আগ্নেয় শিলা : ভূ-অভ্যন্তরের অত্যধিক চাপে উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ভূত্বকের কোন দুর্বল ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রূপে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে আগ্নেয় শিলা সৃষ্টি করে তার নাম নিঃসারী আগ্নেয় শিলা। ব্যাসল্ট ও অবসিডিয়ান এই ধরনের আগ্নেয় শিলার উদাহরণ।
• উদবেধী আগ্নেয়শিলা : ভূ-অভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা ভূত্বকের দুর্বল ফাটল বা ছিদ্রের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে না পেরে ভূ-অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে উদবেধী আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি করে। গ্রানাইট, ডোলেরাইট এই ধরনের আগ্নেয় শিলার উদাহরণ। উদবেধী আগ্নেয়শিলা আবার দু'ধরনের হয় - উপপাতালিক শিলা এবং পাতালিক শিলা।
• উপপাতালিক শিলা : ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের কোন ফাটল বা ছিদ্র পথে ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে সৃষ্টি করে উপপাতালিক শিলা। ডোলেরাইট এই জাতীয় শিলার উদাহরণ।
• পাতালিক শিলা : ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের একেবারে তলদেশে অতি ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তা হল পাতালিক শিলা। গ্রানাইট এই শিলার উদাহরণ।
• গ্রানাইট : সাধারণত এই আগ্নেয় শিলায় মহাদেশীয় ভূত্বক গঠিত। হালকা সাদা, ধূসর থেকে গোলাপি রঙের এই শিলা কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার, মাইকা ও হর্নব্লেন্ড খনিজ দ্বারা গঠিত। এই শিলা খুব ভারী এবং শক্ত হওয়ায় গ্রানাইটের ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি। ভূ অভ্যন্তরে অতি ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বাঁধায় এই শিলার দানা গুলো কিছুটা বড় হয় (ব্যাস 3 মিলিমিটার এর বেশি)। গ্রানাইট শিলায় গঠিত অঞ্চলের ভূমিরূপ সাধারনতো গোলাকার হয়।
• ব্যাসল্ট : মহাসাগরীয় ভূত্বক সাধারণত এই শিলায় গঠিত হয়। খুব ভারী ও শক্ত ক্ষয় প্রতিরোধী এই শিলা গাঢ় ধূসর থেকে কালো রঙের হয়। ব্যাসল্ট শিলা গঠনকারী প্রধান খনিজ গুলি হল কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার অলিভিন ও পাইরক্সিন। ব্যাসল্ট শিলায় উল্লম্ব দারণ ও ফাটলের সংখ্যা খুব বেশি থাকায় এর প্রবেশ্যতা যথেষ্ট বেশি। খুব দ্রুত জমাট বেঁধে গঠিত হওয়ায় এর দানা গুলো বেশ সূক্ষ্ম (1 মিলিমিটার এর কম)। ব্যাসল্ট শিলা গঠিত অঞ্চলে চ্যাপ্টা আকৃতির ভূমিরূপ দেখা যায়।
• পাললিক শিলা : আগ্নেয় শিলা বহুদিন ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তি যেমন – নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্র তরঙ্গ প্রভৃতির প্রভাবে উৎস স্থান থেকে ধীরে ধীরে ক্ষয় প্রাপ্ত ও পরিবাহিত হয়ে কোন সমুদ্র বা নদীর তলদেশে জমাট বেঁধে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং উপরের চাপে ও নিচের তাপে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি করে। পলি জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয় বলে এর নাম পাললিক শিলা। চুনাপাথর, বেলেপাথর, কাদাপাথর প্রভৃতি পাললিক শিলার উদাহরণ। পলির উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলা দু প্রকার - সংঘাত শিলা এবং অসংঘাত শিলা।
• সংঘাত শিলা : প্রাচীন শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বহুদিন ধরে জমাট বেধে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে সংঘাত শিলা বলা হয়। কংগ্লোমারেট, ব্রেকসিয়া প্রভৃতি এই শিলার উদাহরণ।
• অসংঘাত শিলা : রাসায়নিক উপায়ে অথবা জৈবিক উপায়ে সৃষ্ট শিলা হল অসংঘাত শিলা। চুনাপাথর, লবণ শিলা প্রভৃতি হল এই ধরনের শিলার উদাহরণ।
• যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা তিন প্রকারের – কাদা পাথর, বেলে পাথর এবং কংগ্লোমারেট । কাদা পাথরের দানা গুলি 0.06 মিলিমিটারের কম ব্যাস যুক্ত হয়, বেলে পাথরের দানা গুলির ব্যাস 0.06 থেকে 2 মিলিমিটার পর্যন্ত হয় এবং কংগ্লোমারেটের দানা গুলির ব্যাস 2 মিলিমিটারের বেশি হয়।
• চুনাপাথর : চুনাপাথর বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট বিশুদ্ধ জলে দ্রবীভূত হয় না। কিন্তু বৃষ্টির জল বা অ্যাসিড মিশ্রিত জলে দ্রবীভূত হয় এবং ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয়। এর ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কম এবং প্রবেশ্যতা বেশি। চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টির জলে দ্রুত গর্ত সৃষ্টি হয় এবং জল নিচে নেমে যায়। চুনা পাথরের রং সাদা, ধূসর, সবুজ, কালচে হতে পারে। সিমেন্ট তৈরিতে, লৌহ ইস্পাত শিল্পে কাঁচামাল হিসাবে চুনাপাথর ব্যবহৃত হয়।
• বেলে পাথর : বেলে পাথরের প্রবেশ্যতা বেশি হলেও ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি। বেলেপাথর হলুদ, কমলা, লাল, গোলাপী, সাদা, ধূসর হতে পারে। বেলেপাথরে গঠিত অঞ্চলে মৃত্তিকা লবণাক্ত ও এর উর্বরতা কম। স্থাপত্য, স্মৃতিসৌধ এই পাথরে নির্মিত হয়। লালকেল্লা, উদয়গিরি-খণ্ডগিরির মন্দির, খাজুরাহোর মন্দির, জয়সালমীরের সোনার কেল্লা বেলে পাথরে তৈরি।
• কাদা পাথর : কালচে ধূসর রংয়ের কাদা পাথরের মধ্যে স্তরায়ন খুব স্পষ্ট। এটি একটি মিহিদানা যুক্ত শিলা। এর সছিদ্রতা খুব বেশি। এই শিলা বেশ নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির। একে পাতলা স্তরে ভাঙা যায় বলে বাড়ির টালী তৈরিতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। সহজেই ভেঙে যায় বলে এই শিলায় গঠিত অঞ্চলে বড় ধরনের নির্মাণকার্য করা উচিত নয়।
• জীবাশ্ম : স্তরে স্তরে জমাট বেঁধে পাললিক শিলা সৃষ্টির সময় কখনো কখনো সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ তার মধ্যে চাপা পড়ে যায়। পরে পাললিক শিলার মধ্যে ঐ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ প্রস্তরীভূত হলে দেহের ছাপ থেকে যায়। একে বলে জীবাশ্ম।
• কয়লা এবং খনিজ তেল : প্রায় 30 থেকে 35 কোটি বছর আগে ভু আন্দোলনের সময় পৃথিবীর অরণ্য ভূগর্ভে চাপা পড়ে ভূগর্ভের চাপ ও তাপে উদ্ভিদের কাণ্ডে সঞ্চিত কার্বন স্তরীভূত হয়ে কয়লায় পরিণত হয়।প্রায় 7 থেকে 10 কোটি বছর আগে পাললিক শিলা স্তরে নানা ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহ চাপা পড়ে, উপরের প্রবল চাপে ও ভূগর্ভের প্রচণ্ড তাপে হাইড্রোজেন ও কার্বন এর দ্রবণে পরিণত হয়ে খনিজ তেলের সৃষ্টি হয়। খনিজ তেলের উপরের স্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি দেখা যায়। শুধুমাত্র সছিদ্র পাললিক শিলা স্তরে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।
• রূপান্তরিত শিলা : ভূ-অভ্যন্তরের প্রচণ্ড চাপ, তাপ ও নানা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আগ্নেয় ও পাললিক শিলা দীর্ঘ সময় ধরে তার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট শিলায় পরিণত হয়। একে বলে রূপান্তরিত শিলা। অত্যধিক তাপে পিট কয়লা গ্রাফাইটে, প্রচণ্ড চাপে শেল স্লেটে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যান্ডালুসাইট সিলিমেনাইটে রূপান্তরিত হয়।
• রূপান্তরিত শিলার উদাহরণ :
• গ্রানাইট থেকে নিস
• ব্যাসল্ট থেকে অ্যাম্ফিবোলাইট
• বেলে পাথর থেকে কোয়ার্টজাইট
• চুনাপাথর থেকে মার্বেল
• পিট কয়লা থেকে গ্রাফাইট
• শেল থেকে স্লেট, স্লেট থেকে ফিলাইট এবং ফিলাইট থেকে শিস্ট উৎপন্ন হয়।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.