• কারা প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র তৈরি করে ? : ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা প্রথম কতগুলো বিন্দু ও দাগ কল্পনা করে নির্ভুলভাবে পৃথিবীর মানচিত্র তৈরি করেন।
• পৃথিবীর অক্ষ : উত্তর দক্ষিনে পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে চলে যাওয়া কাল্পনিক রেখা কে বলা হয় পৃথিবীর অক্ষ(Earth's Axis)। পৃথিবীর অক্ষের উত্তর প্রান্ত হলো উত্তর মেরু(North Pole) ও দক্ষিণ প্রান্ত হলো দক্ষিণ মেরু(South Pole)। পৃথিবীর অক্ষ একদিকে হেলে আছে। অক্ষের উত্তর প্রান্ত সারাবছর ধ্রুবতারার দিকে মুখ করে থাকে। পৃথিবী যে পথে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে তা হলো পৃথিবীর কক্ষপথ (orbit)। কক্ষপথ যে তলে রয়েছে তাহলো কক্ষতল (orbital plane)। পৃথিবীর অক্ষ কক্ষতলের সঙ্গে 66½° কোণ করে থাকে।
• নিরক্ষরেখা : দুই মেরু থেকে সমান দূরে পৃথিবীর মাঝ বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক রেখাকে নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা (Equator) বলে। এই রেখার উত্তরের অংশ হলো উত্তর গোলার্ধ (Northern Hemisphere) এবং দক্ষিণের অংশ হলো দক্ষিণ গোলার্ধ (Southern Hemisphere)। নিরক্ষরেখার যে তল বরাবর রয়েছে তাহলো নিরক্ষীয় তল (Equatorial Plane)। এই তলের সঙ্গে পৃথিবীর অক্ষ 90° কোণ করে আছে।
• অক্ষরেখা : নিরক্ষরেখার সমান্তরালে পূর্ব-পশ্চিমে অঙ্কিত কাল্পনিক রেখা গুলো হল অক্ষরেখা (parallels of latitude)। নিরক্ষরেখার দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বড়। নিরক্ষরেখার মান 0°। বাকি অক্ষরেখা গুলো ক্রমশ মেরুর দিকে দৈর্ঘ্যে ছোট হতে থাকে। সব অক্ষরেখাই পূর্ণ বৃত্ত। পৃথিবীর উত্তর মেরুর মান 90° উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর মান 90° দক্ষিণ। 23½° উত্তর অক্ষরেখা কর্কটক্রান্তি রেখা ও 23½° দক্ষিণ অক্ষরেখা মকর ক্রান্তি রেখা নামে পরিচিত। 66½° উত্তর অক্ষরেখার নাম সুমেরুবৃত্ত ও 66½° দক্ষিণ অক্ষরেখার নাম কুমেরু বৃত্ত। পৃথিবীর মোট অক্ষরেখার সংখ্যা 181 – 2 (দুটি মেরু বিন্দু) = 179 টি।
• অক্ষাংশ : নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্ব কে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। কলকাতার অক্ষাংশ 22°34’ উত্তর। পৃথিবীর মোট অক্ষাংশের সংখ্যা 90 + 90 + 1 (নিরক্ষরেখা) = 181 টি।
• দ্রাঘিমারেখা : ভূ পৃষ্ঠের উপর দিয়ে যেসব কল্পিত বৃত্তার্ধ সমাক্ষরেখা গুলিকে ছেদ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত প্রসারিত রয়েছে তাদের বলা হয় দ্রাঘিমা রেখা বা মধ্যরেখা। এদের দেশান্তর রেখাও বলা হয়। দ্রাঘিমা রেখা গুলো প্রত্যেকটা একই দৈর্ঘ্যের আর প্রত্যেকটাই অর্ধবৃত্ত। তাই ঠিক হয় একটা নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখা থাকবে যেখান থেকে অন্য দ্রাঘিমা রেখার মান গোনা শুরু হবে। 1884 সালে আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় স্থির হয় লন্ডনের গ্রিনিচ মান মন্দিরের (রয়্যাল অবজারভেটরি) ওপর দিয়ে যে দ্রাঘিমা রেখা চলে গেছে সেটাই মূল দ্রাঘিমারেখা বা মূলমধ্যরেখা (prime meridian), যার মান 0°। 0° দ্রাঘিমারেখার পূর্বে 180 টি এবং পশ্চিমে 180 টি দ্রাঘিমা রেখা আছে। 180° পূর্ব এবং 180° পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখা দুটি একই রেখা, যা মূলমধ্যরেখার ঠিক বিপরীতে রয়েছে। 0° দ্রাঘিমা রেখা ও তার বিপরীতে থাকা 180° দ্রাঘিমার মিলিত বৃত্ত পৃথিবীকে সমান দুটো অংশে ভাগ করে। পূর্ব অংশের নাম পূর্ব গোলার্ধ (Eastern Hemisphere) এবং পশ্চিম অংশের নাম পশ্চিম গোলার্ধ (Western Hemisphere)।
• দ্রাঘিমাংশ : মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব-পশ্চিমে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্ব কে সেই স্থানের দ্রাঘিমাংশ বা দ্রাঘিমা বলে। কলকাতার দ্রাঘিমা 88°30’ ।
• দ্রাঘিমার সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক : পৃথিবীর পরিধির কৌনিক মাপ 360°। পশ্চিম থেকে পূর্বে একবার সম্পুর্ণ পাক খেতে পৃথিবীর সময় লাগে 24 ঘন্টা অর্থাৎ 360° ঘুরতে 24 ঘন্টা সময় লাগে। সুতরাং 1 ঘন্টায় পৃথিবী 360° ÷ 24 = 15° ঘুরে থাকে। 1° ঘুরতে (60 মি ÷ 15° = 4 ) 4 মিনিট সময় লাগে।
• গ্রিনিচের সময় (G.M.T.) : গ্রিনিচের দ্রাঘিমা 0°। গ্রিনিচের স্থানীয় সময় পৃথিবীর সর্বত্র প্রমাণ সময় বা Greenwich mean time (G.M.T.) নামে পরিচিত। গ্রিনিচের স্থানীয় সময়ের সঙ্গে যে কোন জায়গার স্থানীয় সময়ের পার্থক্য দেখে সেই স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়। ক্রোনোমিটার নামক নিখুঁত ঘড়ি গ্রিনিচের সময় নির্ভুলভাবে নির্দেশ করে। সমুদ্রের মাঝে নাবিক সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান দেখে তার জায়গার মধ্যাহ্ন ঠিক করে নেয়। তারপর ক্রোনোমিটারে গ্রিনিচের সময় দেখে তার জাহাজ কোন দ্রাঘিমায় রয়েছে তা বুঝতে পারে।
• স্থানীয় সময় : যে মুহুর্তে সূর্য যে দ্রাঘিমা রেখার মাথার উপর আসে সেই মুহূর্তে সেখানে মধ্যাহ্ন হয় অর্থাৎ ঘড়িতে ঠিক বেলা বারোটা বাজে। এইভাবে কোন স্থানে আকাশে সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান অনুসারে যে সময় স্থির করা হয় তাকে স্থানীয় সময় বা local time বলে।
• প্রমাণ সময় : একই দেশের মধ্যে একাধিক দ্রাঘিমা রেখা থাকতে পারে। ফলে একাধিক স্থানীয় সময় লক্ষ্য করা যায়। একাধিক স্থানীয় সময় থাকার ফলে ট্রেন, এরোপ্লেন প্রভৃতি যাতায়াত ডাক ও তার বিভাগের সংবাদ আদান-প্রদান প্রভৃতি কাজে ভীষণ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য অধিকাংশ দেশই নিজের দেশের মাঝখানের নির্দিষ্ট একটি দ্রাঘিমা রেখার সময়কে প্রমাণ সময় হিসেবে ধরে নেয়া। এই সময় কে দেশের ‘প্রমাণ সময়' বা ‘Standard Time' বলে। রাশিয়ায় 11 টি, কানাডায় 6 টি এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে 9 টি প্রমাণ সময় অঞ্চল দেখা যায়।
• ভারতীয় প্রমাণ সময় : ভারতের মাঝখান দিয়ে 88½° পূর্ব দ্রাঘিমা এলাহাবাদ ও কোকনদের উপর দিয়ে গেছে। এই দ্রাঘিমার স্থানীয় সময়ই ভারতীয় প্রমাণ সময় বা Indian standard time (I.S.T.) হিসেবে স্বীকৃত। গ্রিনিচের সময় থেকে ভারতীয় সময় 5 ঘন্টা 30 মিনিট বেশি। ভারতীয় প্রমাণ সময় কলকাতার স্থানীয় সময়ের চেয়ে 24 মিনিট কম।
• আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা : আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলতে এমন এক কাল্পনিক রেখা কে বোঝায় যে রেখা মোটামুটি ভাবে 180 ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা কে অনুসরণ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং যে রেখা থেকে পৃথিবীতে একটি নতুন তারিখ শুরু হয় বা যে রেখায় গিয়ে একটি তারিখ শেষ হয়। 180° দ্রাঘিমায় স্বল্প কিছু স্থল ভাগ থাকার ফলে এই রেখাকে সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশে পূর্বদিকে, অ্যালুসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে পশ্চিম দিকে এবং ফিজি দ্বীপপুঞ্জের কাছে পূর্ব দিকে কিছুটা বাকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমগামী কোন জাহাজ এই রেখা পার হলে জাহাজের পঞ্জিকায় একদিন যোগ করা হয় এবং পূর্বগামী জাহাজ এই রেখা পার হলে একদিন বাদ দেওয়া হয়।
• প্রতিপাদ স্থান : ভূপৃষ্ঠের কোন বিন্দু থেকে কল্পিত ব্যাস বিপরীত গোলার্ধের যে বিন্দুতে ভূপৃষ্ঠ কে স্পর্শ করে তাকে ওই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান (Antipods) বলে। কোন স্থানের দ্রাঘিমা ও তার প্রতিবাদে স্থানের দ্রাঘিমা একসঙ্গে 180° হয়। সুতরাং 180° থেকে এক স্থানের দ্রাঘিমা বাদ দিলে তার প্রতিবাদে স্থানে দ্রাঘিমা পাওয়া যায়। কিন্তু এক স্থানের দ্রাঘিমা পূর্বে হলে তার প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা পশ্চিমে হবে। কলকাতার অক্ষাংশ 22°34’ উত্তর এবং দ্রাঘিমা 88°30’ পূর্ব সুতরাং কলকাতার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ 22°34’ দক্ষিণ ও দ্রাঘিমা 180° - 88°30’ পূর্ব = 91°30’ পশ্চিম। কলকাতার প্রতিপাদ স্থান দক্ষিণ আমেরিকার চিলি দেশের পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে রয়েছে। কোন স্থান ও তার প্রতিবাদে স্থানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য 12 ঘন্টা।
• গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) : পৃথিবীর যে কোন জায়গার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানবার একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থা হল GPS বা Global Positiosyste System । পৃথিবীর কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকরী হয়। বর্তমানে জাহাজে, বিমানে, আধুনিক গাড়ি বা দামি মোবাইল ফোনে জিপিএস থাকে।
• পৃথিবীর অক্ষ : উত্তর দক্ষিনে পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে চলে যাওয়া কাল্পনিক রেখা কে বলা হয় পৃথিবীর অক্ষ(Earth's Axis)। পৃথিবীর অক্ষের উত্তর প্রান্ত হলো উত্তর মেরু(North Pole) ও দক্ষিণ প্রান্ত হলো দক্ষিণ মেরু(South Pole)। পৃথিবীর অক্ষ একদিকে হেলে আছে। অক্ষের উত্তর প্রান্ত সারাবছর ধ্রুবতারার দিকে মুখ করে থাকে। পৃথিবী যে পথে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে তা হলো পৃথিবীর কক্ষপথ (orbit)। কক্ষপথ যে তলে রয়েছে তাহলো কক্ষতল (orbital plane)। পৃথিবীর অক্ষ কক্ষতলের সঙ্গে 66½° কোণ করে থাকে।
• নিরক্ষরেখা : দুই মেরু থেকে সমান দূরে পৃথিবীর মাঝ বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক রেখাকে নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা (Equator) বলে। এই রেখার উত্তরের অংশ হলো উত্তর গোলার্ধ (Northern Hemisphere) এবং দক্ষিণের অংশ হলো দক্ষিণ গোলার্ধ (Southern Hemisphere)। নিরক্ষরেখার যে তল বরাবর রয়েছে তাহলো নিরক্ষীয় তল (Equatorial Plane)। এই তলের সঙ্গে পৃথিবীর অক্ষ 90° কোণ করে আছে।
• অক্ষরেখা : নিরক্ষরেখার সমান্তরালে পূর্ব-পশ্চিমে অঙ্কিত কাল্পনিক রেখা গুলো হল অক্ষরেখা (parallels of latitude)। নিরক্ষরেখার দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বড়। নিরক্ষরেখার মান 0°। বাকি অক্ষরেখা গুলো ক্রমশ মেরুর দিকে দৈর্ঘ্যে ছোট হতে থাকে। সব অক্ষরেখাই পূর্ণ বৃত্ত। পৃথিবীর উত্তর মেরুর মান 90° উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর মান 90° দক্ষিণ। 23½° উত্তর অক্ষরেখা কর্কটক্রান্তি রেখা ও 23½° দক্ষিণ অক্ষরেখা মকর ক্রান্তি রেখা নামে পরিচিত। 66½° উত্তর অক্ষরেখার নাম সুমেরুবৃত্ত ও 66½° দক্ষিণ অক্ষরেখার নাম কুমেরু বৃত্ত। পৃথিবীর মোট অক্ষরেখার সংখ্যা 181 – 2 (দুটি মেরু বিন্দু) = 179 টি।
• অক্ষাংশ : নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্ব কে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। কলকাতার অক্ষাংশ 22°34’ উত্তর। পৃথিবীর মোট অক্ষাংশের সংখ্যা 90 + 90 + 1 (নিরক্ষরেখা) = 181 টি।
• দ্রাঘিমারেখা : ভূ পৃষ্ঠের উপর দিয়ে যেসব কল্পিত বৃত্তার্ধ সমাক্ষরেখা গুলিকে ছেদ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত প্রসারিত রয়েছে তাদের বলা হয় দ্রাঘিমা রেখা বা মধ্যরেখা। এদের দেশান্তর রেখাও বলা হয়। দ্রাঘিমা রেখা গুলো প্রত্যেকটা একই দৈর্ঘ্যের আর প্রত্যেকটাই অর্ধবৃত্ত। তাই ঠিক হয় একটা নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখা থাকবে যেখান থেকে অন্য দ্রাঘিমা রেখার মান গোনা শুরু হবে। 1884 সালে আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় স্থির হয় লন্ডনের গ্রিনিচ মান মন্দিরের (রয়্যাল অবজারভেটরি) ওপর দিয়ে যে দ্রাঘিমা রেখা চলে গেছে সেটাই মূল দ্রাঘিমারেখা বা মূলমধ্যরেখা (prime meridian), যার মান 0°। 0° দ্রাঘিমারেখার পূর্বে 180 টি এবং পশ্চিমে 180 টি দ্রাঘিমা রেখা আছে। 180° পূর্ব এবং 180° পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখা দুটি একই রেখা, যা মূলমধ্যরেখার ঠিক বিপরীতে রয়েছে। 0° দ্রাঘিমা রেখা ও তার বিপরীতে থাকা 180° দ্রাঘিমার মিলিত বৃত্ত পৃথিবীকে সমান দুটো অংশে ভাগ করে। পূর্ব অংশের নাম পূর্ব গোলার্ধ (Eastern Hemisphere) এবং পশ্চিম অংশের নাম পশ্চিম গোলার্ধ (Western Hemisphere)।
• দ্রাঘিমাংশ : মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব-পশ্চিমে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্ব কে সেই স্থানের দ্রাঘিমাংশ বা দ্রাঘিমা বলে। কলকাতার দ্রাঘিমা 88°30’ ।
• দ্রাঘিমার সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক : পৃথিবীর পরিধির কৌনিক মাপ 360°। পশ্চিম থেকে পূর্বে একবার সম্পুর্ণ পাক খেতে পৃথিবীর সময় লাগে 24 ঘন্টা অর্থাৎ 360° ঘুরতে 24 ঘন্টা সময় লাগে। সুতরাং 1 ঘন্টায় পৃথিবী 360° ÷ 24 = 15° ঘুরে থাকে। 1° ঘুরতে (60 মি ÷ 15° = 4 ) 4 মিনিট সময় লাগে।
• গ্রিনিচের সময় (G.M.T.) : গ্রিনিচের দ্রাঘিমা 0°। গ্রিনিচের স্থানীয় সময় পৃথিবীর সর্বত্র প্রমাণ সময় বা Greenwich mean time (G.M.T.) নামে পরিচিত। গ্রিনিচের স্থানীয় সময়ের সঙ্গে যে কোন জায়গার স্থানীয় সময়ের পার্থক্য দেখে সেই স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়। ক্রোনোমিটার নামক নিখুঁত ঘড়ি গ্রিনিচের সময় নির্ভুলভাবে নির্দেশ করে। সমুদ্রের মাঝে নাবিক সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান দেখে তার জায়গার মধ্যাহ্ন ঠিক করে নেয়। তারপর ক্রোনোমিটারে গ্রিনিচের সময় দেখে তার জাহাজ কোন দ্রাঘিমায় রয়েছে তা বুঝতে পারে।
• স্থানীয় সময় : যে মুহুর্তে সূর্য যে দ্রাঘিমা রেখার মাথার উপর আসে সেই মুহূর্তে সেখানে মধ্যাহ্ন হয় অর্থাৎ ঘড়িতে ঠিক বেলা বারোটা বাজে। এইভাবে কোন স্থানে আকাশে সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান অনুসারে যে সময় স্থির করা হয় তাকে স্থানীয় সময় বা local time বলে।
• প্রমাণ সময় : একই দেশের মধ্যে একাধিক দ্রাঘিমা রেখা থাকতে পারে। ফলে একাধিক স্থানীয় সময় লক্ষ্য করা যায়। একাধিক স্থানীয় সময় থাকার ফলে ট্রেন, এরোপ্লেন প্রভৃতি যাতায়াত ডাক ও তার বিভাগের সংবাদ আদান-প্রদান প্রভৃতি কাজে ভীষণ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য অধিকাংশ দেশই নিজের দেশের মাঝখানের নির্দিষ্ট একটি দ্রাঘিমা রেখার সময়কে প্রমাণ সময় হিসেবে ধরে নেয়া। এই সময় কে দেশের ‘প্রমাণ সময়' বা ‘Standard Time' বলে। রাশিয়ায় 11 টি, কানাডায় 6 টি এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে 9 টি প্রমাণ সময় অঞ্চল দেখা যায়।
• ভারতীয় প্রমাণ সময় : ভারতের মাঝখান দিয়ে 88½° পূর্ব দ্রাঘিমা এলাহাবাদ ও কোকনদের উপর দিয়ে গেছে। এই দ্রাঘিমার স্থানীয় সময়ই ভারতীয় প্রমাণ সময় বা Indian standard time (I.S.T.) হিসেবে স্বীকৃত। গ্রিনিচের সময় থেকে ভারতীয় সময় 5 ঘন্টা 30 মিনিট বেশি। ভারতীয় প্রমাণ সময় কলকাতার স্থানীয় সময়ের চেয়ে 24 মিনিট কম।
• আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা : আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলতে এমন এক কাল্পনিক রেখা কে বোঝায় যে রেখা মোটামুটি ভাবে 180 ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা কে অনুসরণ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং যে রেখা থেকে পৃথিবীতে একটি নতুন তারিখ শুরু হয় বা যে রেখায় গিয়ে একটি তারিখ শেষ হয়। 180° দ্রাঘিমায় স্বল্প কিছু স্থল ভাগ থাকার ফলে এই রেখাকে সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশে পূর্বদিকে, অ্যালুসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে পশ্চিম দিকে এবং ফিজি দ্বীপপুঞ্জের কাছে পূর্ব দিকে কিছুটা বাকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমগামী কোন জাহাজ এই রেখা পার হলে জাহাজের পঞ্জিকায় একদিন যোগ করা হয় এবং পূর্বগামী জাহাজ এই রেখা পার হলে একদিন বাদ দেওয়া হয়।
• প্রতিপাদ স্থান : ভূপৃষ্ঠের কোন বিন্দু থেকে কল্পিত ব্যাস বিপরীত গোলার্ধের যে বিন্দুতে ভূপৃষ্ঠ কে স্পর্শ করে তাকে ওই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান (Antipods) বলে। কোন স্থানের দ্রাঘিমা ও তার প্রতিবাদে স্থানের দ্রাঘিমা একসঙ্গে 180° হয়। সুতরাং 180° থেকে এক স্থানের দ্রাঘিমা বাদ দিলে তার প্রতিবাদে স্থানে দ্রাঘিমা পাওয়া যায়। কিন্তু এক স্থানের দ্রাঘিমা পূর্বে হলে তার প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা পশ্চিমে হবে। কলকাতার অক্ষাংশ 22°34’ উত্তর এবং দ্রাঘিমা 88°30’ পূর্ব সুতরাং কলকাতার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ 22°34’ দক্ষিণ ও দ্রাঘিমা 180° - 88°30’ পূর্ব = 91°30’ পশ্চিম। কলকাতার প্রতিপাদ স্থান দক্ষিণ আমেরিকার চিলি দেশের পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে রয়েছে। কোন স্থান ও তার প্রতিবাদে স্থানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য 12 ঘন্টা।
• গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) : পৃথিবীর যে কোন জায়গার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানবার একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থা হল GPS বা Global Positiosyste System । পৃথিবীর কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকরী হয়। বর্তমানে জাহাজে, বিমানে, আধুনিক গাড়ি বা দামি মোবাইল ফোনে জিপিএস থাকে।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.