মেঘ || Cloud


• ছোট ছোট অসংখ্য জল কনা (ব্যাস 0.01 – 0.06 মিলিমিটার) এবং তুষার কণার সমষ্টি নিয়ে মেঘ গঠিত হয়।
• “The international cloud code” অনুসারে বায়ুমণ্ডলে মোট 28 রকমের মেঘের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
• খুব বেশি উচ্চতার মেঘ বোঝাতে ‘সিরো'(Cirro), মাঝারি উচ্চতার মেঘ বোঝাতে ‘অল্টো’(Alto) এবং বৃষ্টিপাত যুক্ত মেঘ বোঝাতে ‘নিম্বো'(Nimbo) শব্দ তিনটি ব্যবহার করা হয়।

উঁচু মেঘ : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 6,150 মিটার থেকে 12,300 মিটার (20,000 ফুট থেকে 40,000 ফুট) উচ্চতার মধ্যে বায়ু মন্ডলে যে মেঘ দেখা যায় তাকে উঁচু মেঘ বলে। বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই মেঘকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় -

সিরাস মেঘ(Cirrus) : এই মেঘ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তুষার কণা দিয়ে গঠিত। সাদা রঙের এই মেঘ দেখতে অনেকটা হালকা পালকের মতো। এই মেঘ পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে। তবে মাঝেমধ্যে তুষারপাত হতে পারে। সারা আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও তার মধ্যে দিয়ে সূর্যকে দেখা যায়।

সিরো-কিউমুলাস(Cirro-Cumulus) : এই মেঘ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তুষার কণা দিয়ে গঠিত এবং সাদা রঙের। পেঁজা তুলোর মতো এই মেঘে ঢাকা আকাশ দেখতে অনেকটা ম্যাকারেল মাছের পিঠের মত। তাই এই মেঘে আকাশ ছেয়ে গেলে তাকে ম্যাকারেল আকাশ বা ম্যাকারেল স্কাই বলে। এই মেঘ পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে।

সিরো-স্ট্রাটাস(Sirro-Stratus) : এই মেঘ খুব উঁচুতে অবস্থান করে। এর রং দুধের মত সাদা এবং অত্যন্ত স্বচ্ছ। সমস্ত আকাশ চাদরের মত ঢেকে রাখে। অনেক সময় এই মেঘ আকাশে সূর্য এবং চাঁদের চারপাশে বলয়ের আকারে অবস্থান করে। এই মেঘ আসন্ন ঝড়ের আভাস দেয়।

মাঝারি মেঘ : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2460 থেকে 6150 মিটার উচ্চতার মধ্যবর্তী বায়ুমন্ডলে যে মেঘ দেখা যায় তাদের মাঝারি মেঘ বলে এই মেঘ সাধারণত দুই রকম –

অল্টো-কিউমুলাস(Alto-Cumulus) : গোলাকার পশম গুচ্ছের মত দেখতে এই মেঘের রং ধূসর হয়। আকাশে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে এবং এদের মধ্যে দিয়ে নীল আকাশ দেখা যায়। এই মেয়ে পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে।

অল্টো-স্ট্রাটাস(Alto-Stratus) : এই মেঘ আকাশে ঘন চাদরের মতো অবস্থান করে। এর রং ধূসর এবং নীল হয়। এই মেঘের মধ্যে দিয়ে সূর্যকে অস্পষ্ট দেখায়। এই মেঘ খারাপ আবহাওয়া ও প্রবল বৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়।

নীচু মেঘ : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2,460 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের যে মেঘ দেখতে পাওয়া যায় তাকে নীচু মেঘ বলে। এই মেঘ প্রধানত তিন প্রকার –

স্ট্র্যাটো-কিউমুলাস(Strato-Cumulus) : মাঝারি উচ্চতার অল্টো-কিউমুলাস মেঘ গাঢ় কালো ও ভারী হয়ে নিচু আকাশে ভেসে এলে তাকে স্ট্র্যাটো-কিউমুলাস মেঘ বলে। গোলাকৃতি এই মেঘের একটা দিক উজ্জ্বল এবং অন্য দিক অন্ধকার। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এই মেঘ শীতকালে সমগ্র আকাশ ঢেকে ফেলে এবং প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।

স্ট্র্যাটাস(Stratus) : এই মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েকশ' মিটার উচ্চতায় অবস্থান করে এবং ঘন কুয়াশার মতো সমগ্র আকাশকে চাদরের মত ঢেকে রাখে। এই মেঘের রং ধূসর।

নিম্বো-স্ট্র্যাটাস(Nimbo-Stratus) : স্ট্যাটাস মেঘ খুব নিচে নেমে এসে বৃষ্টিপাত ঘটালে তাকে নিম্বো-স্ট্র্যাটাস মেঘ বলে। এই মেঘ খুব ঘন, এবড়ো-খেবড়ো, আকারহীন এবং কালো রংয়ের। এই মেঘে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পাত বা তুষারপাত হয়।

উপরদিকে প্রসারণশীল মেঘ : এই মেঘ চাদরের মত বিস্তৃত না হয়ে গাছের মতো উড়তে প্রসারিত হয়। সাধারণত দু রকমের হয় –

কিউমুলাস(Cumulus) : এই মেঘ এর আকৃতি অনেকটা গম্বুজের মতো। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস উপরে উঠে ঘনীভূত হলে এই ধরনের মেঘের সৃষ্টি হয়। এই মেঘ পরিষ্কার আবহাওয়ার নির্দেশক।

কিউমুলো-নিম্বাস(Cumulo-Nimbus) : কিউমুলাস মেঘ খুব বেশি উচ্চতায় উঠে গম্বুজাকৃতি হারিয়ে ফেললে তাকে কিউমুলো-নিম্বাস মেঘ বলে। এই মেঘের পাদদেশ 1500 মিটার উচ্চতায় এবং শীর্ষ দেশ প্রায় 10 থেকে 12 কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে। এর শীর্ষ দেশ বেশ ছড়ানো এবং দেখতে অনেকটা নেহাই এর মত। এই মেঘের রং কালো। এই মেঘে বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়। কখনো কখনো এই মেঘে শিলা বৃষ্টি হয়। কালবৈশাখীর সময় উতকখন-পশ্চিম আকাশে এইরকম মেঘ থেকে বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে একে বজ্র-মেঘ’ও বলা হয়।

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Advertisement